আমি
ডিটেকটিভ ট্রিলিয়ান ম্যাথুর। আমার একটা ডিটেকটিভ এজেন্সি আছে। সেখান থেকে কয়েকদিনের
জন্য ছুটি নিলাম। ভাবলাম যাই, নির্জন কোথাও ঘুরে আসি। কিন্তু সে সুখ আমার কপালে সৃষ্টিকর্তা
রাখেননি। কাল রাত ৮টায় আমি একটা পত্ৰ পাই। সেখান থেক জানতে পারি যে বিখ্যাত লেখক মিঃ
ট্রাম্পসনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পত্রলেখক চান যেন আমি তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্বটা
নিই। অগত্যা বেড়িয়ে পড়তে হল।
আমি
ট্যাক্সি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। তখন রাত এগারোটা কি বারোটা। পৌঁছে গিয়ে দেখি সাড়ে বারোটা
বেজে গেছে। লেখকের বাড়িটা অনেক ওপরে। তাই বাড়ির কাছে আমাকে নামিয়ে দিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার
চলে গেলো। আমি ওপরে ওঠা শুরু করলাম।
পাহাড়ের
মতো অবস্থা। এত উঁচুতে যে লেখক কেন বাড়ি করেছেন সেটা কে জানে? কিন্তু আমাকে তো যেতেই
হবে। অনেক কষ্টে পাহাড়ের মতো জায়গা টপকালাম।
আমি
বাড়ির সামনে হাজির হলাম। দেখি আমার সামনে একটা গাড়ি আছে। কিন্তু গাড়িটার ছাদ নেই। গাড়ির
সামনে দেখলাম একটা গাছের গুড়ি গুড়ির নিচে একটা ছোট্ট মই পড়ে আছে।
আসলে
গতকাল খুব বৃষ্টি হয়েছিলো। তাই জায়গাটায় একটু পানি জমেছে। যাইহোক, মইটাকে দেখে করে
গেলাম। হয়তো কোনো কাজে লাগতে পারে।
এবার
আমি বাড়ির ভেতরে ঢুকবো। আমার সামনে দেখলাম ওয়েলকাম লেখা একটা বোর্ড। তার পাশে একটা
উঁচু টিলা। শ্যাওলা জন্মে একেবারে সবুজ হয়ে গেছে। তবে তার নিচে পেলাম একটা কুন্নি।
কুন্নি হচ্ছে সেই যন্ত্র যা দিয়ে রাজমিস্ত্রিরা ইটের ওপর সিমেন্টের প্রলেপ দেয়। আমি
কুন্নিটা তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে এগোতে শুরু করলাম।
ভেতরে
যেতেই প্রথমে নজরে পড়লো একটা তাবু যেখানে ভীষণ অন্ধকার। একটা পোস্ট খাড়া করা আছে, যেখান
থেকে তাবুতে বিদ্যুতের তারের সংযোগ। পোস্টের গায়ে একটা ঢাকনা যা স্ক্রু দিয়ে আটকানো
আছে। হয়ত এখানেই কোনো গোলমাল আছে, তাই তাবুতে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। আমার কাছে স্ক্রু
ড্রাইভার ছিলো, কিন্তু আমি পরে এটাকে নিয়ে ভাববো বলে ফেলে গেলাম। আবার তাবুর পাশে একটা
কাঠের বাক্স। বাক্সটা এমনভাবে তৈরি যেন সেখানে বাতাসও প্রবেশ করতে পারবে না। খালি হাতে
এই বাক্সটা ভাঙ্গা সম্ভব ছিলো না।
আমি
খানিকটা সামনে এগিয়ে গেলাম। কিছুদুর গিয়ে দেখলাম একটা বিশাল বাড়ি। হয়টো এটাই মিস্টার
ট্রাম্পসনের বাড়ি। আমি দরজার কাছে গেলাম। দেখি তালার বদলে তিনটা জায়গা। দুইটা ত্রিকোণ,
আর একটা গোল। ত্রিকোণ একটাতে একটা রত্ন বসানো আছে। যেটা নীল রঙয়ের। আর বাকি দুইটা ফাঁকা
আছে। যাইহোক, এবার আমি বাড়ির বর্ণনা দিচ্ছি।
বাড়ির
সামনে একটা মটর ঘর। সেখানে একটা হ্যাক্সোর ব্লেড ঝুলানো আছে। আর মটরের প্লাগ ঢুকানোর
সকেট আছে। কিন্তু তারের মাথা কাটা হওয়ায় কোনো প্লাগ নেই। আমি হ্যাক্সোর ব্লেডটা নিয়ে
বের হয়ে আসলাম।
আমি
বাড়ির ডানদিকে গেলাম। দেখলাম একটা পানির কৃত্রিম ঝরনা। ঝরনার পানি যেখানে পড়ে সেখানে
পানি দিয়ে ভর্তি। পানির ওপর কয়েকটা মরা পাতা পড়ে আছে। তার মধ্যে জ্বলজ্বল করছে একটা
গোল লাল রত্ন। এটাই মেইনডোরের সেই গোল জায়গায় বসাতে হবে তা আমার বদ্ধমূল ধারণা। আমি
রত্ন নিতে পানির মধ্যে হাত দিলাম। যেই না হাতের নখ পানি স্পর্শ করেছে, অমনি এক ধরনের
ছেঁকা লাগলো। আমি পিছিয়ে আসলাম। তার মানে? পানিতে বিদ্যুৎ আছে। কিন্তু আমাকে রত্ন নিতেই
হবে। নাহলে মেইনডোরে বসাবো কিভাবে?
সব
কাজ পরে করব। আগে বলে নিই ঝরনার বামদিকে আর ডানদিকে কী কী আছে।
ঝরনার
ডানপাশে আছে একটা কাত করা ঠেলাগাড়ি। তার পাশে একটা চেয়ার। চেয়ারের ওপর আছে একটা বাক্স
যা ছিলো তালাবদ্ধ। তবে যে চাবিটা দিয়ে এই তালা খোলা হবে তা হবে অনেক ছোট। আর চেয়ারের
নিচে একটা মই পড়ে থাকতে দেখলাম। আর একটা দড়ি ছিলো। আর ঝরনার বামপাশে আছে একটা ছোট্ট
জলাশয়। জলাশয়ের পানি একেবারে নীল। আর তার পাশে একটা গাছ, গাছের নিচে একটু অন্যরকম মাটি।
আমি
আবার বাড়ির কাছে চলে এলাম। বাড়ির বামপাশে গেলাম। বাড়ির ডানপাশে অবশ্য কিছুই নেই। শুধুমাত্র
দুটো ফুলগাছের টব। সেখানে একটা ত্রিভুজাকার রত্ন পেলাম। ফুলের টবের অনেক ওপরে একটা
ছোট্ট জানালা। অনেক উঁচুতে। তবে আমার পাওয়া দুইটি মইয়ের একটা দিয়েও আমি জানালার নাগাল
পাবো না। কিন্তু আমার কাছে দড়ি আছে। তাই দুটো মই যদি জোড়া দিই, তাহলে কাজ হতে পারে।
আমি
তাই করলাম এবং জানালার নাগাল পেয়ে গেলাম। দেখি জানালার এক কোণে একটা প্লাগ ঝুলে আছে।
কিন্তু প্লাগ কাটার জন্যে আমার কাছে প্লাস নেই। আমি মেইনডোরে গিয়ে ত্রিভুজাকার রত্নটা
বসিয়ে দিলাম। কিন্তু গোল রত্নটা তোলার জন্যে আমাকে যে করেই হোক কিছু একটা করতে হবে।
আমি
যদি মটরটা কোনোভাবে চালু করতে পারি তাহলে ঝরনার পানি শুকিয়ে ফেলতে পারবো। কিন্তু মটর
চালু করার জন্যে আমার ঐ প্লাগটা দরকার। কিন্তু আমার কাছে প্লাগ কাটার কোনো জিনিস নাই।
একরকম হতাশ হয়ে গেলাম।
আমি
ভাবলাম কোনো উপায় যখন পেলাম না, তখন আবার প্রথম থেকে শুরু করি।
আমি
আবার সেই গাড়ির কাছে চলে গেলাম। গাড়িতে একটা চাবি পেলাম। চাবি দিয়ে গাড়ির একটা পকেট
খুলতে পারলাম। সেখানে পাওয়া গেলো একটা মানিব্যাগ। মানিব্যাগে টাকার পরিবর্তে পেলাম
একটা কার্ড। সেখানে দেখলাম এই কোড। আমি কোড নিয়ে গেলাম গাড়ির ট্রাংকের কাছে। গিয়ে দেখি
ট্রাংকেরও একই অবস্থা।
আমি
একটুও বিচলিত হলাম না। আমি বুঝে গেছি যে এই নাম্বারগুলো অনুযায়ী আমাকে ট্রাংকের নাম্বার
ঘুরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমি ১ম ও ৩য় নাম্বার ঠিকই আছে। ২য় নাম্বার এমনভাবে কালি করা
যে আমার বোঝার বাইরে। আবার ৪র্থ কোডের নিচে কেমন একটা চিহ্ন দেওয়া।
আমার
বুঝতে অবশ্য কোনো সমস্যা হলো না। আমি ১ম বক্সে ৪ ঘুরিয়ে দিলাম। ২য়টা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে
তো, একটা জিনিস খেয়াল করে দেখো। যতই কালি করা হোক না কেন, চারটা রেখা বাইরে চলে এসেছে।
সুতরাং এখানে নম্বরটা হবে চার। ৩য় নম্বরটা ঠিকই আছে। আর ৪র্থ নম্বরটার নিচে ঐ চিহ্নটার
মানে হলো, নম্বরটাকে উল্টে দিলেই হয়ে যাবে। তোমরা তো জানই ইংরেজির ৬ কে উল্টে দিলে
৯ হয়। ব্যাস, সবগুলো নম্বর বসালাম। এবার খট করে একটা শব্দ হলো। আমি পুশ লেখা বাটনে
চাপ দিলাম। আর গাড়ির ট্র্যাংক খুলে গেলো।
ট্র্যাংকের
ভেতরে আমি পেলাম একটা হাতুরির মাথা, অর্থাৎ লোহার অংশটুকু। আর একটা লোহার বাক্স। বাক্স
তালাবদ্ধ ছিলো। তবে আমার মাথায় এটা আসলো যে হাতুরির মাথা দিয়ে কিছু একটা করতে হবে।
যদি একটা ছোট লাঠি পাই তাহলেই এই দুটো জোড়া লাগিয়ে আমি একটা হাতুড়ি বানিয়ে ফেলতে পারবো।
আমার
পরিকল্পনা সফল। একটা ছোট লাঠি পেলাম গাছের গুড়ির কাছে একটা জায়গায়। অনেক কাদা ছিলো
সেখানে। আমার মনে হলো কাদা ভেতরে কিছু একটা আছে। অমনি কুন্নি দিয়ে খুড়তে শুরু করলাম।
আর পেয়ে গেলাম একটা লাঠি। আমার হাতুড়িও তৈরি হলো।
এবার
হাতুড়ি দিয়ে প্রথম কাজ সেই তাবুর পাশের কাঠের বাক্সটা ভাঙা। হ্যা, কয়েক ঘা লাগাতেই
খানখান। ভেতরে পেলাম একটা প্লাস।
তখন
আমার মনে ভেতরে কি হচ্ছে তা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছো। তাই দেরি না করে আবার বাড়ির
সেই ওপরের জানালায় উঠলাম। যথারীতি প্লাগ কেটে নিচে নামলাম। মটরের ঘরে গিয়ে মটরের তার
আর এই প্লাগ জোড়া দিয়ে প্লাগটা সকেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। ব্যাস, মটর চালু হয়ে গেলো।
আমি ঝরনার কাছে গিয়ে দেখলাম, সব পানি শুকিয়ে গেছে। আর রত্নটা জ্বলজ্বল করছে। আমি রত্নটা
তুলে নিলাম।
তারপর
মেইনডোরের কাছে গেলাম। রত্ন দুইটা মেইনডোরে সেট করলাম। আর একসময় দরজা খুলে গেলো। আমি
ভেতরে গেলাম। ভেতরে গিয়ে যা দেখলাম তার বর্ণনা এবার দিয়ে নিই।
আমার
সামনে একটা দরজা। আমার হাতের বামদিকে একটা আগুন জ্বালানোর জন্য ফায়ারপ্লেস। ফায়ারপ্লেসের
ওপরে একটা লোহার রড রাখা আছে যার এক মাথা বাঁকানো। তার ওপরে একটা জলচিত্র ও একটা ছোট
দেয়ালঘড়ি। আর হাতের ডানপাশে একটা বিরাট দেয়ালঘড়ি, আর সিঁড়ি উঠে গেছে।
আমি
দেখলাম ছোট ঘড়িতে বেজে আছে সাড়ে ৯টা। তাই আমি কি যেন মনে করে এই বিরাট ঘড়িতেও সাড়ে
৯টা বাজিয়ে দিলাম। আর একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। আমি দেখলাম, ঘড়ির বামপাশ থেকে একটা ঢাকনা
খুলে গেলো। আমি সেখানে পেলাম একটা চাবি।
ভাবছো
হয়তো এই চাবি দিয়ে আমি আমার সামনের দরজা খুলতে পারলাম। কিন্তু না, আমার সামনের দরজা
খোলাই ছিলো। তাই আমি ভেতরে গেলাম।
জিনিসপত্র
দেখে আমি বুঝলাম যে এটা রান্নাঘর। একটা শেলফ আছে কিন্তু শেলফের দরজা খোলার গোলাকার
হাতল নেই। তাই আমি শেলফ খুলতে পারলাম না। কিন্তু শেলফের ওপরে একটা চিমটা, একটা ন্যাকড়া
দেখলাম। আর শেলফের গায়ে ঝোলানো আছে একটা ফাঁপা ষ্টীলের পাইপ। আর আমার সামনে আরেকটা
দরজা ছিল। এই দরজাটিও খোলা ছিলো। আমি ভেতরে গেলাম।
গিয়ে
দেখি এটা বারান্দা। বাইরের দিকটা গ্রিল দিয়ে ঘেরা আছে। গ্রিলের ভেতর দিয়ে দেখলাম বাইরে
শাকসবজির চাষ। আর একটা চমৎকার জিনিস দেখলাম। সেটা হলো গ্রিলের ফাকে আটকে আছে সেই গোলাকার
হাতল। আমি আবার রান্নাঘরে গিয়ে চিমটা এনে হাতলটা তুলে নিলাম। আর রান্নাঘরে এসে শেলফে
নব লাগিয়ে দরজা খুললাম। ভেতরে একটা বস্তা পাওয়া গেলো। বস্তার ভেতরে কিছু একটা আছে,
যার গায়ে অনেক কাঁটা। কিন্তু বস্তা কাটার জন্য কোনো উপকরণ আমার কাছে নেই। তাই আমি আবার
বারান্দায় গেলাম।
বারান্দাতে
আরো একটা জিনিস আমার চোখে পড়লো। সেটা হলো বারান্দার এক কোণে একটা ফুলগাছসহ টব রাখা
আছে। টবের পাশে বারান্দার মেঝের কাঠের একটা অংশ একটু কালো রঙের। যদিও মনে হলো ভাঙ্গা
যাবে, কিন্তু এটা ভাঙা আমার খালি খাতে সম্ভব নয়। তাই আমি ফায়ারপ্লেসের ওপর থেকে সেই
রড নিয়ে এলাম।
আগেই
বলেছি রডের একমাথা বাঁকানো। তাই এক্ষেত্রে রডটি লিভারের কাজ করলো। আর কাঠটি উঠে গেলো।
আম ভেতরে পেলাম একটা চাবি।
এবার
আমার পাশের দেয়ালে একটা দরজা। আর সামনের দেয়ালে একটা দরজা। আম যে চাবিটা বড় দেয়ালঘড়িতে
পেয়েছি সেটা দিয়ে আমি পাশের দেয়ালের দরজা খুলতে পারলাম। ভেতরে গিয়ে অনুমান করলাম এটা
ড্রয়িং রুম বা বসার ঘর। কারণ একটা টেবিল আছে, আর আছে দুইটা সোফা, আর একটা চেয়ার। একপাশের
দেয়ালে পর্দা লাগানো। আর একপাশের দেয়ালে দুটো দরজা। একটা সাধারণ দরজা, আর একটা কেচিগেটের
মত। দুটোই তালাবদ্ধ।
আমি
একটা জিনিস খেয়াল করলাম যে দুইটা দরজার মাঝখানে একটা ছবি। ছবির সাথে আবার চাকা লাগানো
আছে। আমি ছবিটাকে টেনে উপরে তুলে দিলাম। ছবির নিচে পাওয়া গেলো একটা সিন্দুক। এবার চিন্তা
করলাম আমাকে যেভাবেই হোক সিন্দুক খুলতে হবে। কিন্তু সিন্দুকের ওপরে তো নাম্বার প্যাড।
অতএব, আমাকে একটা কোড দিতে হবে। কিন্তু আমি কোড পাবো কোথায়?
অনেক
খোঁজার পর আমি কোড পেলাম কোথায় জানো? সেই ফায়ারপ্লেসের ওপরে যে জলচিত্র আছে সেখানে।
জলচিত্রের নিচে লেখা আছে a gift from marco augustino 1/8/1975। এই তারিখের মাঝে লুকিয়ে
আছে আমার দরকারি সেই কোড।
অনেক্ষন
চেষ্টা করার পর আমি সেই কোড পেয়ে গেলাম। তবে যুবক থাকতে হ্যাকিং শিখে ফায়দা হয়েছে বলতে
হবে। হ্যাকিং না শিখলে হয়তো এই সিন্দুকটা আমি খুলতেই পারতাম না। তোমাদের সবার জানার
ইচ্ছে করছে কোডটা কি? তবে শোন, কোডটা ছিলো ১৮৭৫।
সিন্দুক
খুলে গেলো। আমি ভেতরে পেলাম কিছু সোনার বার, একটা গ্যাসবিহীন লাইটার, আর একটা চাবি।
এই চাবি দিয়ে খোলা গেলো কেচিগেটের তালা। আমি ভেতরে গিয়ে দেখি বেশি কিছুই নেই। এটা ছিলো
লেখকের লেখার ঘর। তবে ঘরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে কবি অনেকদিন যাবত এই ঘরে তেমন
আসেন না। ঘরে একটা আলমারি আছে। খুলে দেখলাম, বিশেষ কিছুই নেই।
একটা
চাবি রাখার তাক ছিলো একপাশের দেয়ালে। চাবির তাকে একটা মাত্র চাবি ঝুলানো। এই চাবির
আকার দেখেই আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস হয়ে গেলো যে এই চাবি দিয়ে খোলা যাবে সেই তালাবদ্ধ
বাক্স যেটা বাড়ির বাইরে ঝরনার ডানপাশে কাত করা ঠেলাগাড়ির পাশের চেয়ারের ওপরে আছে। আমি
চাবিটা নিলাম। এবার আমি একটা টেবিল দেখলাম। তার ওপরে কাগজ ছিলো আর ছিলো একটা পেপার
কাটার। আমি পেপার কাটারটি নিলাম।
আমি
এই ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। তারপর সোফায় বসলাম খানিকক্ষণ। হঠাত আমার নজরে পড়লো টেবিলে
একটা চায়ের ট্রে তাখা আছে। তার পাশে আছে একটা সোনালি রঙয়ের চাবি। আমি চাবিটা নিলাম।
এই ঘরে আরেকটা দরজা আছে, আমি তা বলেছি। কিন্তু আমার কাছে থাকা কোনো চাবি দিয়েই এই দরজা
খোলা যাচ্ছিলো না। অগত্যা বারান্দায় ফিরে আসতে হলো।
এবার
বারান্দার সামনের দেয়ালে একটা দরজা আছে। সেটা দিয়ে এখনো যাওয়া হয় নি। তাই আমি আমার
কাছে থাকা সব চাবি ট্রাই করলাম এই দরজায়। কিন্তু কোনোটাতেই কাজ হলো না।
এবার
আমার চোখে পড়লো একটা তাক, যেখানে বাসনকোসন রাখা আছে। তার ফাকে একটা চাবি দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু আমি তাকের নাগাল পাচ্ছিলাম না।
এই
সমস্যা থেকে আমাকে মুক্তি দিলো সেই ষ্টীলের পাইপ। আর আমি শেলফ খুলে একটা বস্তা পেয়েছি,
মনে আছে? তখন কাটার কিছু না পেয়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু এবার আমার কাছে পেপার কাটার
আছে। হ্যাঁ, বস্তা চিরে ফেললাম। ভেতরে পাওয়া গেলো একটা ঝাটা। ঝাটার ডাঁটের কাছে একটা
সরু রড। ব্যাস, সেই রড ঢুকিয়ে দিলাম পাইপের মধ্যে।
এবার
এটা নিয়ে গিয়ে তাকের ওপরকার সমস্ত বাসন ফেলে দিলাম। বাসন ভেঙে গেলো ঠিকই, কিন্তু আমি
চাবি পেয়ে গেলাম। এই চাবি দিয়ে আমার সামনের দরজা খুলে গেলো। আমি ভেতরে গেলাম।
ভেতরে
দেখা পাওয়া গেলো একটা বিছানা। আর তিনটা টেবিল। দুইটা বিছানার দুইপাশে। আর একটা দূরে।
দেয়ালে একটা কুঠার ঝোলানো আছে। আর আছে একটা গুপ্তঘরের দরজা।
গুপ্তঘর
সম্পর্কে আমার ছোটবেলা থেকেই একটা সন্দেহ আছে। তাই শ্যেনচোখে দরজার দিকে তাকালাম। দেখলাম
চারটা গোল গর্ত। তার নিচে চারটে ছবি। পানি, আগুন, মাটি ও বাতাস। পানি, আগুন ও বাতাসের
ছবির ওপর তিনটা তীর আছে। কিন্তু মাটির ছবির ওপরে কোনো কিছু নেই।
সুতরাং
আমাকে এখন খুঁজে বের করতে হবে একটা তীর। আর চারটা গোল জিনিস। তবে জিনিসগুলো যাই হোক
না কেন, সেগুলোর সাথে মাটি, পানি, বায়ুর কোনো একটা সম্পর্ক নিশ্চয়ই থাকবে।
এবার
আমি কবির শোয়ার ঘর পর্যবেক্ষন করতে শুরু করলাম। বিছানার দুইপাশে যে দুইটা টেবিল আছে
তার ওপর পাওয়া গেলো একটা সোনালি চাবি আর একটা গোল মেটে রঙয়ের কয়েন।
ইউরেকা!!
আমি একটা কয়েন পেয়ে গেছি। এটাকে নিয়ে গিয়ে সেট করলাম। তবে এরকম আরো তিনটা কয়েন আমাকে
জোগাড় করতে হবে। আমি দূরের টেবিলের কাছে গেলাম। সেখানে একটা ড্রয়ার আছে। সেই ড্রয়ারটা
খুললাম। ভেতরে পেলাম একজোড়া রাবারের হাতমোজা, একটি স্ক্রু ড্রাইভার আর একটা নোট। আমি
সবগুলো নিলাম। এবার নোটটি খুললাম। দেখি লেখা আছে।
1.
Bedroom
2.
Library
3.
Wall Clock
4.
Box up the chair
///Go to the tent.
আমি
দেখেই বুঝতে পারলাম এগুলো হচ্ছে কয়েনের অবস্থান। প্রথম কয়েনের অবস্থান দেখা যাচ্ছে
শোয়ার ঘরে। আমি এখান থেকে একটা কয়েন পেয়ে গেছি। এবার আমাকে যেতে হবে লাইব্রেরীতে। কিন্তু
লাইব্রেরী কোথায়?
লাইব্রেরী
পাওয়া গেছিলো সিঁড়ি দিয়ে উঠে। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠালাম। সামনে দেখি একটা দরজা। কিন্তু
তালা দুইটা। তালার আকৃতিও ছোট। অতএব, আমার বিশ্বাস এই তালা খুলবে, আমার কাছে থাকা দুইটা
সোনালি চাবি দিয়ে। হ্যাঁ, আমার অনুমানই সত্য। তালা খুলে গেলো। আমি ভেতরে গেলাম।
দেখি
একটা চেয়ারের ওপর একটা বই রাখা। একটা দরজা আছে সামনের দেয়ালে। দেয়ালে দুটো তরবারি আড়াআড়ি
ভাবে রাখা। একটা টেবিলে বইয়ে ভর্তি। টেবিলের ওপর রাখা আছে একটা বাক্স। তার ঢাকনা খুললাম।
ভেতরে পেলাম একটা তীর, আর একটা কয়েন। এই কয়েনটা সোনালি রঙয়ের। সুতরাং কয়েনটা হবে আগুনের
সাথে সম্পর্কিত।
এবার
দেয়ালঘড়ি। আমি তো আগেই বুঝে গেছি যে এই ঘড়িতে ঠিক সময় বাজালেই বাক্স খুলে যায়। আমাকে
এবার বাজাতে হলো ৮ টা ২০। এবার খুলে গেলো ডানপাশ থেকে একটা ঢাকনা। ভেতরে পাওয়া গেলো
একটা কয়েন, যার রঙ নীল। আমার ধারনা, এই কয়েনটা পানির সাথে সম্পর্কিত।
এবার
জিজ্ঞেস করতে পারো, আমি ৮টা ২০ মিনিট সময়টা কোথায় পেলাম। এই সময়টা লেখা ছিলো গুপ্তঘরের
দরজার ওপর।
এবার
শেষ কয়েনটা পেতে হবে। সেটা আছে চেয়ারের ওপর বাক্সে। আর সেই বাক্সের চাবি আছে আমার কাছে।
বাক্সটা খুলে ফেললাম। ভেতরে পেলাম একটা কয়েন, যার রং সাদা। এই কয়েন নিশ্চয়ই বাতাসের
সাথে সম্পর্কিত।
আমি
চারটা কয়েন পেয়ে গেছি। এবার গুপ্তঘরের দরজায় গিয়ে ছবির সাথে মিল রেখে কয়েনগুলো বসালাম।
তীরটাও লাগিয়ে দিলাম। এরপর.........
কোনো
কিছুই ঘটলো না।
কিন্তু
কেন ঘটলো না? আমি বুঝতে পারলাম, নোটে লেখা ছিলো তাবুতে যাওয়ার কথা। তাবুতে গেলেই আমি
হয়তো আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো। তাই আমি তাবুতে চলে গেলাম।
তাবুর
সামনে এসেছি। কিন্তু ভেতরে যাবো কীভাবে, অনেক অন্ধকার। আমি কিন্তু আগেই আন্দাজ করেছি
যে তাবুর বাইরে যে পোস্ট আছে তাতেই ঝামেলা। এবার আমার কাছে স্ক্রু ড্রাইভার আছে, যা
আমি বেডরুমে পেয়েছি। আমি স্ক্রুগুলো খুলে ফেললাম। দেখি তারগুলো সব ছিড়ে আছে।
খালি
হাতে তার ছুঁলে আমাকে ভয়ানক শক খেতে হবে। কিন্তু রাবারের হাতমোজা পড়লে বিদ্যুৎ আমাকে
ছুঁতেও পারবে না। তাই আমি রাবারের হাতমোজা পড়ে তারগুলো জোড়া দিলাম। অমনি অন্ধকার তাবু
আলোকিত হয়ে গেলো। আমি তাবুর ভেতরে গেলাম।
ভেতরে
একটা চেয়ার ও টেবিল। পাশে অনেক কাঠ বড় বড় করে কাটা। এক একটা কাঠ যেন দৈর্ঘ্যে আমার
চাইতেও বড়। আর মাটিতে দেখলাম একটা গুপ্তঘরের দরজা। এতেও তালা। তবে সমস্যা নাই। তোমাদের
মনে আছে নিশ্চয়ই, আমি বারান্দার মেঝের কাঠ ভেঙ্গে একটা চাবি পেয়েছি। সেটা দিয়ে খুলে
গেলো এই তালা। দরজা খুলে ফেললাম। ভেতরে একটা মই লাগানো ছিলো। নিচে নেমে গেলাম। নিচে
দেখা গেলো একটা তেলের ড্রাম। আর কিছুই নেই। তাই আমি আবার ওপরে চলে এলাম। যে টেবিলের
কথা বলেছি, সেখানে পেয়ে গেলাম একটা গ্যাসভর্তি বোতল। আমার গ্যাসবিহীন লাইটারে গ্যাস
ভরে নিলাম। এবার দেখতে পেলাম একটা বই। বইটা খুললাম। দেখি লেখা আছে।
Coin's
Mystery
I
come to know that every coin will work only touching with its particular
element, otherwise it will be useless to place the coins.
তার
নিচেও অনেক কিছু লেখা ছিলো। কিন্তু সেই লেখার ওপর একটা ছেড়া সাদা কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে
দেওয়া। কাগজের ওপর তীরগুলোর দিক দেখানো হয়েছে। আর ওপর পাতায় কোন কয়েন কোন উপাদানের
সাথে স্পর্শ করাতে হবে।
আমার
বুঝতে আর বাকি নেই যে, কেন কয়েনগুলো কাজ করলো না। কারণ কয়েনগুলো কেবল তখন কাজ করবে
যখন আমি কয়েনগুলোকে তাদের নিজস্ব উপাদানের সাথে স্পর্শ করাবো। তাই আমি সবগুলো কয়েন
বের করে নিতে গেলাম। তিনটা কয়েন বের হয়ে এলেও বাতাসের কয়েনটা কোনোমতেই বের করতে পারছিলাম
না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও পারলাম না। এমনভাবেই সেঁটে আছে যেন দরজা আর কয়েন আলাদা কোনো
বস্তুই না।
তাই
বাধ্য হয়ে এটাকে ছেড়ে বাকি তিনটার কাজে লেগে গেলাম।
এবার
প্রথমে আগুনের কাজ করব। কবির ঘর থেকে কুঠারটা নিয়ে এলাম। এবার তাবুতে গেলাম। একটা কাঠকে
ছোট ছোট করে কাটলাম। সেগুলো নিয়ে ফায়ারপ্লেসে স্থাপন করলাম। এবার লাইটার দিয়ে আগুন
ধরিয়ে দিলাম আর কয়েনটা আগুনে ছুঁড়ে দিলাম। একটু পর চিমটা দিয়ে কয়েন তুলে আনলাম।
এবার
আমি পানি ও মাটির কাজ করব। যেকোনো মাটি বা পানি দিয়ে এই কাজ হলো না। অনেকক্ষণ চেষ্টা
করার পর আমাকে যেতে হলো ঝরনার বামপাশে। সেখানে গাছের নিচের মাটি আর পানি দুটোই আছে।
সেগুলো স্পর্শ করিয়ে তুলে আনলাম।
এগুলো
কাজ করছিলাম আর ভাবছিলাম বাতাসের কয়েনটিকে কীভাবে তুলে আনা যায়। কিন্তু মাটি আর পানির
কাজ শেষ হতেই হঠাৎ আমার মাথায় বিষয়টা নাড়া দিলো যেইটা ধস্তাধস্তির সময়ে দিলে আমার অনেকখানি
শক্তি বেঁচে যেতো।
খেয়াল
করো। আমাদের চারপাশে বাতাস রয়েছে। সুতরাং, বাতাসের কয়েনটি সবসময় বাতাসের সংস্পর্শেই
আছে। তাই আলাদা করে কয়েনটিকে বাতাসের সাথে ছোঁয়াতে হবে না।
তাই
এবার আমি বাকি কয়েনগুলোকে তার নিজের জায়গায় বসিয়ে দিলাম। আর নিচের তীরগুলো ঘুরতে ঘুরতে
কেমন আঁকাবাঁকা হয়ে গেলো। আর দরজা পাশে সরতে লাগলো। আমি ভেতরে চলে গেলাম।
দেখি
মিস্টার ট্রাম্পসন একটা চেয়ারে হাত-পা বাধা অবস্থায় রয়েছেন। তার জ্ঞান ছিলো না। তার
মুখ বাঁধা ছিলো বিধায় তিনি চিৎকার করতে পারেননি। আমি গিয়ে তার সব বাঁধন খুলে দিলাম।
পাশে একটা পানির বোতল ছিলো। আমি তার মুখে পানির ছিটা দিলাম। তিনি চোখ মেললেন। আমার
দিকে চাইলেন। বললেন, তুমি কে?
-
স্যার, আমি ট্রিলিয়ান। আমি আপনাকে উদ্ধার করতে এসেছি।
-
ও আচ্ছা।
প্রথম
প্রশ্নটা করলেন অনেক বিস্ময়ের সাথে। আর যখন দ্বিতীয় বাক্যটি বললেন, তখন মনে হলো তিনি
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
আমি
জিজ্ঞেস করলাম, আপনার এ অবস্থা কি ভাবে হলো?
-
আমার এ অবস্থা কে বা কারা করলো তা আমার মনে নেই। আমার এটুকু মনে আছে, একদিন আমি আমার
লাইব্রেরিতে বসে একটা বই খোলার চেষ্টা করছিলাম। হঠাত পেছন থেকে একটা অদ্ভুত গন্ধ পেলাম।
তারপরে আর কিছু মনে নেই।
-
কারো ওপর কি আপনার সন্দেহ আছে?
-
আমার মনে হয় কোনো ডাকাত দল এই কাজ করেছে। কারণ চারদিন আগে আমি নদীতে একটা বাক্স ভেসে
আসতে দেখি। কাছে এলে আমি সেটাকে তুলে নিয়ে আমার লেখার ঘরে রাখি। আমি বাক্সটা খুলতে
পারিনি, কিন্তু আমি জানি ওর ভেতর আছে একটি বিষ্ময়কর আয়না। যার নাম, মিরোর অফ ডেথ।
-
কিন্তু আপনি বাক্স না খুলেই কীভাবে বুঝলেন যে ওর ভেতরে আয়না আছে।
-
তুমি যে আমাকে উদ্ধার করতে আসবে তাও আমি জানি।
-
মানে?
ট্রাম্পসন
হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতে বললেন, ট্রিলিয়ান। অভিনয় কেমন দেখলে আমার?
তারপর
আরো খানিক্ষণ হাসলেন। এরপরে স্বাভাবিক হয়ে বললেন, শোনো, আমার কাছে একটা বই আছে। সেই
বই আমার পারিবারিক রহস্যের। সেখানে সবকিছুই লেখা আছে।
আমি
বইটি দেখতে চাইলাম। লেখক রাজি হলেন। আমাকে নিয়ে আবার লাইব্রেরিতে গেলেন। সেখানে দেখলাম
একটা চেয়ারের ওপর একটা বই রাখা আছে। লেখক বইটি আমার হাতে দিলেন। কিন্তু আমি বইটি খুলতে
পারছিলাম না। আমি লেখককে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। লেখক বললেন, আমি পড়েছি যে আমি যেদিন
বাক্স পাবো সেদিন থেকে এই বইয়ে একপ্রকার তালা লেগে যাবে। এই দেখো মলাটের ওপর তিনটা
চাকতি। আগে কিন্তু ছিলো না। এখন এসেছে। এবার দেখো তুমি খুলতে পারো কিনা।
আমি
কিন্তু খুব সহজেই লকটা খুলে ফেললাম।
আমি
আর লেখক বইটার পাতা ওল্টাতে শুরু করলাম। আশ্চর্য, এতে যা কিছু আছে সবকিছু আমি করেছি।
এমনকি আমি যে কয়েন বসাতে গিয়ে সমস্যায় পড়বো তাও লেখা আছে। শেষ পৃষ্ঠায় আছে একটা আঁকাবাঁকা
রেখা। লেখক বললেন, এইটা নাও আর আমার সাথে লেখার ঘরে চলো।
আমরা
লেখার ঘরে গেলাম। লেখক আমাকে একটা চশমা দিলেন আর বললেন, কেবল এই চশমাটা পড়লেই তুমি
বাক্সটা দেখতে পাবে। তখন আমি বুঝলাম যে ডাকাতেরা এজন্যই এই বাক্সের সন্ধান পায়নি। কেননা,
খালি চোখে কেবল লেখক ছাড়া আর কেউ এই বাক্স দেখতে পায়না। তাইতো প্রথমে এ ঘরে এসে আমিও
বাক্সটা দেখতে পাইনি।
লেখক
এবার সিন্দুক খুললেন। ভেতরে পাওয়া গেলো সেই আয়না। লেখক আমাকে বললেন, আমি আয়না নিয়ে
গুপ্তঘরে যাচ্ছি। আমার লাইব্রেরির সাথেই রয়েছে স্টোররুম। এই চাবিটা নাও। স্টোররুম থেকে
লিকুইড নিয়ে আসবে। আর সাথে একটু কাপড় চাই। আর বড় ঘড়িতে ৩টা বাজালে যা পাবে তাই নিয়ে
চলে এসো।
আমি
স্টোররুম থেকে লিকুইড নিয়ে আসলাম। আসার সময় ঘড়িতে ৩টা বাজিয়ে দিলাম। আর ঘড়ির নাম্বার
প্যাড নিচে নেমে গেলো। ভেতরে পেলাম একটা নীল বল। সেটা নিলাম। আর রান্নাঘরের সেই ন্যাকড়াটা
নিয়ে গুপ্তঘরে গেলাম।
দেখি
লেখক একটা টেবিলের ওপর আয়না স্থাপন করেছেন। তিনি আমার কাচ থেকে ন্যাকড়া আর লিকুইড নিয়ে
আয়না পরিষ্কার করলেন। এবার নীল বলটা আয়নার ওপরে গোল ছিদ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন। আমরা
দেখলাম মুহুর্তেই আয়নার মধ্যে ছবি দেখা গেলো।
আয়নাতে
আমরা যে ভিডিও দেখলাম সেদিন কয়েকটা ডাকাত এসেছিলো। যারা ট্রাম্পসনকে তারই গুপ্তঘরে
বেঁধে রেখেছিলো। তারা প্রতিরাতে আসতো আর আয়নার খোজ করতো। যেহেতু লেখকই কেবল আয়নায় ছবি
দেখার রহস্য জানেন, তাই ডাকাতরা তাকে মেরে ফেলতে সাহস পায়নি। আমরা এটাও দেখতে পেলাম
যে ডাকাত দল আজই এবাড়িতে আসছে এবং তাদের বর্তমান অবস্থান সেখানে, যেখানে আমি ট্যাক্সি
থেকে নেমেছিলাম।
লেখক
চেঁচিয়ে উঠলেন, ও মাই গড। ওরা এসে গেছে। হাতে পেলে আর রক্ষে থাকবে না। এবার একটাই পথ
আছে। আমাদেরকে পালাতে হবে।
আমার
বসার ঘরে যে দরজা তুমি এখনো খোল নি সেটা নদীপথ। এই চাবিটা নিয়ে যাও। দেখো নদীতে একটা
বোট বাঁধা আছে। তার কাছে একটা শিশি আছে। শিশিটা নেবে। এবার তোমাকে তাবুতে গিয়ে তেল
ভরে আনতে হবে। তবে সাবধান, ডাকাতদের সামনে পড়ে যেও না। তাহলে সব শেষ। সব এখন তোমার
ওপর ট্রিলিয়ান। এক্ষুনি যাও।
আমি
দরজা খুলে শিশি নিয়ে তাবুতে গেলাম। নিচে নামলাম। তেল ভরলাম। শুনতে পেলাম ওদের হাসি।
আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। আমি চোখমুখ বুজে দৌড়াতে শুরু করলাম। একজন মনে হয় আমাকে
দেখতে পেয়েছে। আমি ছুটছি। শুনতে পেলাম, কেউ চিৎকার দিয়েছে, কন হ্যায় উহাপে? রুকো রুকো।
আমি
বোটে উঠলাম। লেখক আগেই সবকিছু তৈরি করে আগেই বোটে উঠেছেন। আমি মেশিনে তেল ভরে বোট চালু
করলাম। এবার আমরা চলতে শুরু করলাম শহরের দিকে। পেছনে ঘুরে দেখি কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে
আছে নদীর তীর ঘেঁষে।
তারা কয়েকজন বন্দুক তাক করলো। দু-একটা গুলির শব্দ পেলাম। একটা গুলি এসে পড়েছে একেবারে নৌকার মটরের কাছে। কিন্তু আমাদের কিছু হয় নিম সামনেই নদীর বাঁক। বাঁক পেরোলেই ডাকাত আমাদের ছুঁতেও পারবে না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বাঁক পেড়োলাম এবং ডাকাতদের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলাম।
লেখককে জিজ্ঞেস করলাম আয়না কোথায়? লেখক বললেন, "টুকরো টুকরো করে এসেছি। অমন আয়না আমার কোনো কাজে লাগবে না যেটা আমার জীবনে ঝুঁকি এনে দিয়েছিলো। এবার ডাকাতগুলো কেবল একবার ভাঙা আয়নার দিকে তাকাক, তাহলেই ওদের কীর্তি শেষ।"
ডাকাতদের কী হবে তা নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই। আমি যে লেখককে স্বাভাবিক অবস্থায় তার শহরের বাড়িতে পৌঁছে দিতে পেরেছি, তাতেই আমি খুশি।
আর এভাবেই শেষ হলো সেই ভয়ানক আয়নার কাহিনী।
কাহিনী শেষ













