মিস্ট্রি টেলস - বুক অফ ইভিল (Gold Version)

0
    এই রহস্যটা মূলত একটা বইকে কেন্দ্র করে। বইটি হলো দ্য বুক অফ ইভিল। অর্থাৎ শয়তানের বই। এটা কোনো সাধারণ বই নয়। এতে এমন অনেক মন্ত্র আছে যেগুলো যদি কেউ উচ্চারন করে তাহলে সে কালো শক্তি অর্থাৎ ব্লাক পাওয়ার অর্জন করতে পারবে।

নরম্যান হিলার নামের একজন প্রফেসর সেই শক্তি অর্জন করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি একটা গুহা থেকে বইটা চুরি করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার চুরির মাশুল তাকে তার জীবন দিয়ে দিতে হয়েছিলো। তার চুরির ফলে আজও বইটা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ডেভিড নামক আরেকজন তার বন্ধু ছিলেন। তিনি নাকি তাকে অনেক বারণ করেন। এখন যখন তিনি মারাই গেছেন তাহলে তো আর কোনো প্রশ্ন নেই। অনেক কষ্টে তিনি মিডিয়ার হাত থেকে এই বিষয় গোপন করেছেন। তিনি জানতেন যে বইটা ঐ প্রফেসরের বাড়িতেই আছে। কিন্তু তিনি চান না যে বইটা কারো সামনে আসুক। তাই তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন আমি যেন বইটাকে সেই জায়গায় রেখে আসি যেখান থেকে এটা চুরি হয়েছিলো। তাই আমাকে বেরিয়ে পরতে হলো। যেহেতু এটা সিক্রেট মিশন ছিলো তাই আমাকে রাতে বের হতে হলো।

শুরু করার আগে আমি আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই। আমি ডিটেকটিভ ন্যাফিড নেভারু। দা টু ডিটেকটিভস এজেন্সির নির্বাহী কর্মকর্তা। খুব স্টিক্ট বলে আমার একটা বদনাম আছে সত্য, কিন্তু আমি ততটা কঠোর না। যাইহোক কাজ শুরু করি।

আমি বাড়িতে উপস্থিত হলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি ঘরে তালা দেওয়া। বইটাকে নিশ্চয়ই নরম্যান এমন জায়গায় রাখেননি যাতে আমি খুঁজে পাই। তাই আমাকে গোয়েন্দার কাজ করতেই হবে।

তালা খুলতে হবে। কিন্তু আমার কাছে তো চাবি নেই। এবার কি করি? আমার মনে পড়লো ডেভিড আমাকে বলেছিলেন যে ঐ প্রফেসরের ঘরের একটা ডুপ্লিকেট চাবি ঘরের একটা জানালার পাশে টেবিলের ওপর আছে।

তাই আমি প্রত্যেকটা জানালা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। অবশেষে আমি চাবিটা দেখতে পেলাম। এবার চাবিটা বের করি কীভাবে? জানালা ভেঙে ফেলবো? তাই করি কিন্তু ভাঙতে পারলাম না।

আমার স্মরণে রাখা উচিত যে আমি একটা বই নিতে এসেছি যেটা হচ্ছে বুক অফ ইভিল। তাই আমি এটা বুঝলাম এই মিশনটা একটা নির্দিষ্ট সিস্টেমের মধ্যে আছে। তাই আমাকে সিস্টেম অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সিস্টেম না থাকলে প্রফেসর ডেভিড নিজেই বইটা বের করে গুহায় রেখে আসতে পারতেন। আমাকে ডাকার কোনো প্রয়োজন হতো না তার।

আর যেই সিস্টেম তৈরি হয়েছে তা মূলত এই বইয়ের জাদু। ঐ সিস্টেমে কাজ করলেই কেবল আমি ঐ বই পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো। আর যদি ঐ সিস্টেমে কাজ না করি তাহলে আমি তো বইয়ের কোনো খোঁজ পাবোই না, এমনকি কোনো ক্লুও বের করতে পারবো না।

আমি আমার সামনে কি কি দেখলাম তার একটা বর্ণনা দিয়ে নিই। আমার সামনে বিশাল একটা বাড়ি। এই বাড়ির সামনে একটা মেইলবক্স ছিলো। আর ডানদিকে দেখলাম একটা ডাস্টবিন। আর একটা ল্যাম্পপোস্ট দেখলাম। যার সাথে একটা দড়ি লাগানো আছে। আমি দড়িটা নিলাম। আর বাড়ির দরজায় উঠতে একটা সিঁড়ি আছে। তার পাশে আমি একটা প্লাস পেলাম।

এবার আগে মেইলবক্সের সাথে কি কি করলাম তা বলে নিই। আমি কাছে গিয়ে দেখলাম মেইলবক্সটা একটা লোহার তার দ্বারা স্ট্যান্ডের সাথে আটকানো। মেইলবক্স খুলতে গিয়ে দেখি তালা দেওয়া। এবার খুলবো কিভাবে? আমি জানতাম কীভাবে তার দ্বারা তালা খোলা যায়। আমি যদি কোনোভাবে এই তার দিয়ে একটা চাবির মত বানাতে পারি তাহলেই মেইলবক্স খুলতে পারবো।

আমি প্রথমে প্লাস দ্বারা এই তারের খানিকটা কেটে নিলাম। তারপর এই প্লাস দিয়েই তারটার মাথা সামান্য বেঁকিয়ে চাবির মত বানালাম। আর এটা দিয়েই মেইলবক্সের তালা খুলে ফেললাম।

এই উপায়ে আমি মেইলবক্স খুললাম ঠিকই, কিন্তু সদর দরজার তালা এটা দিয়ে খোলা সম্ভব না। কারন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে অনেক বড় চাবি লাগবে। তাই ঐ চাবি বের করা ছাড়া উপায় নেই।

মেইলবক্সের ভেতর পেলাম একটা পার্সেল, শক্ত কাগজে মোড়ানো। প্লাস দিয়ে কাগজ কেটে ফেললাম। ভেতরে ছিলো একটা হীরার আংটি। আমি আংটি দিয়ে জানালার কাচ গোল করে কেটে ফেলতে সক্ষম হলাম।

তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, আমি এমন বোকামি কেন করলাম। আমার হাতে যে প্লাস আছে তা দিয়েই তো আমি জানালার কাচ ভাঙতে পারতাম। সেটা অন্যরাও করতো। আমিও চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। হয়তো এটা এই বইয়ের কীর্তি।

যাইহোক আমি জানালা তো খুলে ফেললাম। কিন্তু আমি কোনোমতেই চাবির নাগাল পাচ্ছিলাম না। এখন কি করবো? এই ভাবতে ভাবতে আমি দেখতে পেলাম একটা ফুলের টব। যেখানে ফুলগাছটা একটা লাঠির সাহায্যে ঠেকনা দেওয়া আছে। আমি লাঠিটা নিলাম।

কিন্তু লাঠি দিয়ে হবে না। আমাকে আরো একটা জিনিস জোগাড় করতে হবে। তাই ডাস্টবিনের কাছে গেলাম। যদি প্রয়োজনীয় কিছু একটা পাই।

সত্যি তাই হলো! আমি একটা চুম্বক পেয়ে গেলাম। এটা দিয়ে কাজ করা যাবে। তবে আমি আরেকটা জিনিস পেলাম। সেটা একটু অদ্ভুত জিনিস। একটা লোহার পাতা। তবে পাতাটাও পুরো না। অর্ধেক অংশ। কি যেন ভেবে আমি পাতাটা সঙ্গে নিলাম।

যাইহোক, আমি চুম্বক পেয়ে গেছি। এবার চাবি বের করা যাক। এই ভেবে আমি এই চুম্বকটা লাঠির মাথায় বাঁধলাম ল্যাম্পপোস্ট থেকে পাওয়া সেই দড়ি দিয়ে। আর জানালার সেই ফাকা দিয়ে লাঠিটা ঢুকিয়ে দিলাম। চাবিটি ভাগ্যিস লোহার ছিলো। তাই চুম্বকের সাথে আটকে গেলো। আমি চাবি বের করে নিয়ে এলাম। আর চাবি দ্বারা দরজা খুলে আমি ভিতরে ঢুকলাম।

ভেতরে ঢুকে পড়েছি। এবার আগে কি কি আছে এখানে তার বর্ণনা দিয়ে নিই।

আমার সামনে একটা ওপরে ওঠার সিঁড়ি। তার শেষপ্রান্তে এক বিরাট বড় তৈলচিত্র। ঐখান থেকে আবার বামদিকে ও ডানদিকে ওঠার সিঁড়ি। আমি যেখানে দাড়িয়ে আছি তার ডানদিকে একটা আর বামদিকে একটা দরজা।

আমি বামদিকের দরজাটা খোলার অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেটা আটকে ছিলো এবং তাই খুলল না। তখন আমি উপায় না দেখে ডানদিকের দরজায় গেলাম। আশ্চর্য ব্যাপার, এক ধাক্কা মারতেই দরজা খুলে গেলো। আমি ভেতরে গেলাম।

ভেতরটা ছিলো অনেকটা বেলকুনির মত। সেখানে একটা দরজা দেখলাম, আর দেখলাম বাড়ির বাগানে যাওয়ার রাস্তা। আমি ভাবলাম এই দরজা হয়তো ডাইনিং রুমের। দরজার এক জায়গায় আমি একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম। দেখি একটা বর্গাকার স্থানে অনেকগুলো পাতার আকৃতি খোপ করা। সেখানে পাতা বসানো আছে আলাদা আলাদা রঙয়ের। আমি ডাস্টবিন থেকে যে পাতাটা পাই সেটা এখানে বসালাম। কিন্তু পাতাটি অর্ধেক হওয়ায় সেখানে বসলো না। তখন মনে হলো হয়তো এই বাড়িতে কোথাও এই পাতার বাকি অংশ আছে। আমাকে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। বাগানে থাকতে পারে। এই ভেবে বাগানে গেলাম।

বাগানে দেখলাম একটা পাকা জলাশয় আর একটা ছোট্ট ঘর। ঘর বলা যায় না, কারণ ছাদ আছে কিন্তু বেড়া নাই। যাইহোক আমি প্রথমে জলাশয়ের কাছে গেলাম। দেখলাম যে জলাশয় একেবারে পানিতে পূর্ণ। তার মধ্যে শাপলার পাতাও আছে বেশ কয়েকটা। জলাশয়ের ধার শান দিয়ে বাঁধানো। আমি ভালো করে শানের দিকে তাকালাম। দেখলাম একটা লুডু খেলার ডাইস আটকে আছে সেখানে। একবারে আটকানো। নখ দিয়ে খুচিয়েও তুলতে পারলাম না। এটা তোলার একটা জিনিস লাগবে। এই ভেবে আমি ঘরটিতে গেলাম।

ঘরের মধ্যে একটা হারমোনিয়াম ছিলো। হারমোনিয়ামের কী-বোর্ডের ওপরের অংশে একটা ডাকনা। আর তার পাশে আবার একটা ডাইস আটকে আছে। বলা বাহুল্য, এই ডাইসটা আমি তুলতে পেরেছি। কিন্তু ঢাকনা খুলতে পারলাম না।

হঠাৎ আমার মনে পড়লো আমি একটা সিনেমায় দেখেছিলাম, যেখানে হারমোনিয়াম বাজিয়ে বাজিয়ে তালা খোলা হত। যদি এই হারমোনিয়াম বাজালে ঢাকনাটা খুলে যায়!! এই ভেবে আমি হারমোনিয়াম বাজাতে শুরু করলাম।

কিন্তু কোনো শব্দ নেই। আমার মনে হলো, এই ডাইসটার জন্যই শব্দ হচ্ছে না।

আমি ডাইসটা তার নিজের জায়গায় রেখে দিলাম। হ্যাঁ, আমার অনুমানই সত্য!! হারমোনিয়ামে সুর চলে এসেছে। আর কিছুক্ষনের মধ্যে ঢাকনাও খুলে গেল। পেলাম একটা চাবি।

এবার ডাইসটা বের করে নিলাম। আমি যখন ঘর হতে বের হতে যাবো তখনই দেখি দুইটা লোহার পাতা। আমি সে দুটোও নিলাম। তারপর প্রায় দৌড়ে এসে খাবার ঘরের দরজায় পাতা দুইটি সেট করলাম। কিন্তু পাতা দরকার তিনটা আমি ভাবলাম একবার ওপরের তালাটা ঘুরে আসি। সেখানে যদি পেয়ে যাই।

আমি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম। প্রথমে বামদিকে গেলাম। ওঠার পরে দেখি আমার হাতের বামপাশে একটা লাইব্রেরী আর হাতের ডানপাশে তিনটা ঘরের দরজা। আমি লাইব্রেরীতে গেলাম। লাইব্রেরীতে একটা বিশাল বইয়ের তাক। তাকের একজায়গায় দেখলাম ৬ আর ১ লেখা আছে। হয়তো এটা কোনো সংকেত। আরও দেখলাম আছে দুটো সোফা, আর একটা টেবিল। আমি টেবিলের ওপরে একটা চাবি পেলাম। সেটা ব্যাগে রাখলাম। আর বিশেষ কিছু নজরে এলো না।

তাই আমি এবার দরজার কাছে গেলাম। দরজা তিনটির দুইটি দুই পাশের দেয়ালে, আর একটা আমার সামনে। পাশের দুইটা দরজা খুলতে পারলাম না। সামনের দরজা দেখলাম তালা দেওয়া। তবে আমার কাছে দুটো চাবি আছে। এই তালা খোলা গেলো লাইব্রেরীতে পাওয়া চাবি দিয়ে। আমি ভেতরে গেলাম।

ঘরের ভেতরে দেখলাম একটা বড় বিছানা। তার পাশে একটা টেবিল। অনেকগুলো ড্রয়ার আছে। আমি প্রতিটা ড্রয়ার খুলে দেখলাম। শেষে একটা ড্রয়ারে পেয়ে গেলাম সেই লোহার পাতার অর্ধেক অংশ আর একটা আঠার প্যাকেট। আমি এই আঠা দিয়ে পাতার দুই অংশ যুক্ত করলাম।

তারপর আমি নিচে নেমে গেলাম। খাবার ঘরে গিয়ে পাতাটি সেট করলাম। আর মাঝে থেকে একটা ঢাকনা খুলে গেলো। আমি চাবি দেওয়ার জায়গা দেখতে পেলাম। হারমোনিয়ামে যে চাবি পেয়েছি সেটা এখানে কাজ করলো। আমি ভেতরে গেলাম।

সেখানে গিয়ে দেখলাম একটা বড় ডাইনিং টেবিল। দেয়ালের একপাশ দরজার মত ফাঁকা। আর দেয়ালের অন্যদিকে একটা আস্ত দরজা দেখলাম। আমি সেই দরজা দিয়ে ভেতরে গেলাম।

ভেতরে ঢুকে দেখি আমার সামনে একটি রান্নার জিনিসপত্র রাখার শেলফ, সামনে একটা চেয়ার, তারপাশে একটা আঠার বালতি, শেলফের পাশে একটা গ্যাসের চুলা। এই আঠাভরা বালতির মধ্যে একটা লোহার রড আটকে আছে।

এবার আমি পর্যবেক্ষন করতে লেগে গেলাম। প্রথমে শেলফ খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে দেখার সময় একটা চাবি পেলাম যেটা শেলফ এর ওপরে একটা পেরেকের সাথে ঝুলানো ছিলো। যেহেতু এই চাবিটা শেলফের সাথেই ছিলো, তাই মনে হলো এটা এই শেলফেরই কোনো ড্রয়ারের চাবি হতে পারে। অনেক খুঁজে দেখলাম একটা মাত্র ড্রয়ার লক করা। আমার চাবি দিয়ে সেটা খুলল। ভেতরে পেলাম একটা ছুরি।

তারপর তুলে নিলাম একটা কেটলি ও একটা ন্যাকড়া যা গ্যাসের চুলার ওপর ছিলো।

এবার আঠাভরা বালতির কাছে গেলাম। আঠার গন্ধ নিলাম। তখনই বুঝলাম এটা কোনো সাধারণ আঠা নয়। এমন ধরণের আঠা সম্পর্কে আমি বইয়ে পড়েছি। এই আঠায় যদি গরম পানি ঢালা যায়, তাহলে এটা একেবারে পানির মতো তরল হয়ে যায়। কিন্তি যদি ঠান্ডা পানি ঢালা যায় তাহলে এটা আবার জমে পাথর হয়ে যাবে।

আমি কেটলি পেয়েছি। আর বাগানের সেই জলাশয়ে প্রচুর পানি আছে। আর গ্যাসের চুলাও হাতের কাছে আছে। তাই আমাই কেটলি নিয়ে বাগানে গেলাম। পানি নিলাম। আর গ্যাসের চুলায় কেটলি রেখে চুলা চালু করলাম। খানিক্ষন গরম হতে দিলাম। তারপর ন্যাকড়া দিয়ে গরম কেটলিটা ধরে গরম পানি মিশিয়ে দিলাম আঠার মধ্যে। ব্যাস, আঠা গলে পানি। আমি ভেতরে থাকা লোহার রডটা তুলে নিলাম। যাক রান্নাঘরে আর কোনো কাজ নেই, এই ভেবে আবার ডাইনিং রুমে আসলাম।

আমি লক্ষ্য করেছি একটা দরজার আকারের দেয়াল। ওখানে দেখলাম একটা জায়গায় কার্পেট আটকানো। ছুড়ি দিয়ে সেটা কেটে ফেললাম। দেখি একটা চাবির আকারের গর্ত। চাবিটা হবে ফুলের পাতার মত। কিন্তু তারার আকৃতি।

এই রহস্যের সমাধান আমি পেয়েছিলাম। তার জন্য আমাকে ডাইসগুলো সম্পর্কে তদন্ত করতে হয়েছে। এবার সেটা বলি।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় আমি লক্ষ্য করলাম সিঁড়ির হাতলের সাথে একটা ঢাকনা আটকানো। সেই ঢাকনার চার কোণে চারটে বর্গাকার গর্ত। যাক সেটাকে পাত্তা না দিয়ে আমি উপরে উঠছিলাম ডানপাশে কি আছে দেখার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখলাম বামপাশে যা দেখেছি তার উল্টো দৃশ্য। অর্থাৎ বামদিকে একটা দরজা। আর ডানদিকে একটা লাইব্রেরি।

আগের প্রথমেই আমি গেলাম লাইব্রেরিতে। একদম আগের লাইব্রেরির মতো এটা টেবিলের ওপর একটা চাবি পেয়েছি এখানেও। পেলাম আরো দুইটা নম্বর। ২ এবং ৩। আমি বেড়িয়ে আসলাম। দরজার কাছে গেলাম। সবশেষ পাওয়া চাবি দিয়ে খুলল দরজাটা। ভেতরে গেলাম। এখানে তেমন কিছু পাইনি। শুধু বিছানার পাশে একটা জায়গায় দেখলাম কাঠ অন্য রকমের।

আমি লোহার রডটা দিয়ে কাঠটা ভেঙে ফেললাম। ভেতরে পাওয়া গেলো একটা ডাইস।

এবার আমার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার। আমি সিঁড়ির হাতলের ওপর যে ঢাকনা দেখেছি, সেখানে যে ৪টা গর্ত। সেখানে বসাতে হবে এই ডাইসগুলো। আমার কাছে ডাইস আছে দুইটা। একটা পেলাম এখানে, আরেকটা হারমোনিয়ামে পেয়েছি। আর একটা ডাইস আছে জলাশয়ের পাড়ে। মনে আছে, আমি নখ দিয়ে তুলতে পারিনি। কিন্তু তাতে কি? এবার আমার কাছে

একটা ছুড়ি আছে। সেটা ব্যবহার করে আমি ডাইসটা তুলে আনলাম।

কিন্তু ডাইস দরকার চারটা। আমার কাছে আছে তিনটা। তাই চার নম্বরটা খুঁজে বের করার জন্য পর্যবেক্ষন শুরু করতে হল। এটা খুঁজে বের করতে একটু সময় লেগেছিলো। তোমরা ধারণাও করতে পারবে না কোথায় পেলাম শেষ ডাইসটা। সেই কাহিনীও বলছি।

সারা বাড়ি খোঁজা শেষ। কিন্তু ডাইস পাওয়া গেল না। আমার রাগ হচ্ছিলো প্রচন্ড। রাগের মাথায় আমি হাতের লোহার রডটা ছুঁড়ে দিলাম। সেটা গিয়ে পরবি তো পর একেবারে বিশাল তৈলচিত্রটার ওপর। আর কাগজ উঠে গেলো। ভেতরে দেখলাম আরেকটা আলাদা কাগজ বসানো। ছুড়ি দিয়ে সেটা কেটে ফেললাম। ভেতরে পেয়ে গেলাম আমার প্রত্যাশিত জিনিস, একটা ডাইস। এবার ডাইসগুলো সেট করলাম। কিন্তু আমি তো কোড জানি না। তাহলে ডাইসের কোন নম্বর সামনে রাখবো?

এবার আমার কাছে পরিষ্কার হলো লাইব্রেরির ওই কোডগুলো। ব্যাস, বসিয়ে দিলাম ডাইস নম্বর অনুযায়ী। আর ঢাকনা নিচে নেমে গেলো। আমি পেয়ে গেলাম গুপ্তঘরের দরজার সেই তারকাকৃতি চাবিটি।

তখনই চলে গেলাম গোপন দরজার কাছে। বসিয়ে দিলাম চাবি। আর দরজা পাশের দিকে সরে গেলো। আমি ভেতরে গেলাম।

গিয়েই দেখি আমার সামনে ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বলছে। তার পাশে একটা কাঠের চাকা। তার পাশেই আছে একটা সিন্দুক। সেটা খুললাম। আর পেয়ে গেলাম সেই ঐতিহাসিক বই, দ্য বুক অফ ইভিল!!!!

আমি ডেভিড কে ফোন করলাম। তিনি ফোন ধরতেই আমি বললাম,

-হ্যালো, প্রফেসর ডেভিড। শুনতে পাচ্ছেন। আমি ন্যাফিড।

-হ্যাঁ হ্যাঁ ন্যাফিড। বল। তদন্ত কেমন এগোচ্ছে? -এগোচ্ছে মানে? একেবারে শেষপ্রান্তে পৌছে গেছে। আমি বইটা পেয়ে গেছি।

-ওয়াও, শাবাশ মাই বয়। তাহলে তুমি বইটা পেয়ে গেছো। এবার তোমাকে সেই গুহায় যেতে হবে, যেখান থেকে বইটা চুরি হয়েছিলো।

-হ্যাঁ আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।

-তোমার ওপর আমার ভরসা আছে। তুমিই পারবে, বইটাকে সঠিক জায়গায় রেখে গোটা মানবজাতিকে বইটার অভিশাপ হতে রক্ষা করতে।

আমি চলে গেলাম কোর্টবার্গ। সেই গুহায় পৌঁছলাম। আমার সামনে দেখি একটা গাছ, ও একটা দরজা। ঘরটা অনেকদিন ধরে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে। কেউ এখানে অন্তত কয়েক বছর আসে না। কিন্তু আলো কীভাবে আছে এখানে? সবজায়গায় কেমন যেন রহস্য বিদ্যমান!!

যাইহোক দরজায় তালা ছিলো, শেকলও ছিলো, আবার লোহার বালা ছিলো। এবার আমি আর চাবির খোঁজ করব না। লোহার রড তো নিয়ে এসেছি। দিলাম এক ঘা। তালা ভেঙে গেলো। শেকল, বালা সব পড়ে গেলো আমি ভিতরে গেলাম।

ভেতরে একটা কুয়া দেখলাম। আর একটা গাছ। আর একটা বিশাল বাড়ি। হারিকেন জ্বলছে। কিন্তু গাছের ওপরের এক ডালের সাথে বাধা। আমি আবার গাছের ওঠা জানি না। তাই হারিকেনটা নামাতে পারব না। ইস, যদি গাছে উঠতে পারতাম!

আমাকে নামতে হবে কুয়াতে। ডেভিড এটাই বলেছিলেন। কিন্তু কুয়ার ভেতরে তো প্রচন্ড অন্ধকার। হারিকেনটাও নামাতে পারব না। তবুও গাছের কাছে গেলাম। দেখি গাছের গোড়ায় রাখা আছে একটা কুঠার, একটা গ্যাসলাইট, আর একটা পাটের দড়ি পড়ে ছিলো। একটা মশাল বানানোর সবচেয়ে উপযোগি উপকরণ এগুলো। আমি তাই মশাল বানানোর পরিকল্পনা করলাম।

আমি প্রথমে কুঠার দিয়ে গাছটার সবচেয়ে নিচের ডালটা কাটলাম। তারপর ডাল্টির মাথায় পাটের দড়িটি পেচিয়ে নিলাম। এবার গ্যাফ্লাইট দিয়ে আগুল ধরিয়ে দিলাম। ব্যাস, মশাল তৈরি। আমি তখন কুয়ায় নামতে শুরু করলাম।

কুয়ার একেবারে নিচে নেমে দেখলাম কুয়ার দেয়ালে একটা গোপন রাস্তা। রাস্তার মুখ আটকানো আছে জানালার মত একটা ঢাকনা দ্বারা। দেয়ালে একটা ফুটো আছে।

আমি যদি আরেকটু চিকন হতাম তাহলে এই রডগুলোর ভিতর দিয়েই চলে যেতে পারতাম। কিন্তু সেটা হয়নি। স্লিম বলে এত প্রশংসা আমার, আর আজ এই স্লিম হওয়া আমার কোনো কাজে এলো না? কিন্তু ঢুকতে তো হবেই। তাই যেভাবেই হোক এই রড বাকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর তার জন্য আমার লাগবে একটা লোহার রড, একটা শিকল আর একটা লোহার বালা।

উপকরণগুলো কাছেই আছে। আমি আবার উপরে উঠে সেগুলো নিয়ে এলাম। এবার বালাটা দেয়ালের ফুটোর সাথে সেট করলাম। তারপর শিকলটা রডের ভেতর দিয়ে ঘুরিয়ে এনে বালার সাথে সেট করলাম। এবার আমার হাতের লোহার রডটা শিকলের মধ্যে ঢুকিয়ে একটা প্যাঁচ দিলাম। আমার পরিকল্পনা সফল!!! রড বেঁকে গেছে।

আমি ভেতরে চলে গেলাম। রাস্তা যে শেষই হয় না। যেতে লাগলাম। আরো একটু এগিয়ে দেখা পেলাম আলোর। সেখানে পৌঁছতেই দেখলাম আমি একটা ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছি। আমার সামনে একটা উঁচু স্তম্ভ। তার ওপরে একটা বইয়ের আকারের গর্ত। আর তার ঢাকনা পাশে সরে আছে।

আমি রেখে দিলাম বইটা সেই গর্তের ভেতর। আর গর্তের ঢাকনা নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে গেলো।

ডেভিডের কথামত আমি বইটাকে তার নিজের জায়গায় রেখে দিলাম। বইটার কেস সমাপ্ত হলো।

আমি বের হতে যাচ্ছিলাম। হঠাত শুনতে পেলাম কেউ বলছে,

Thank you, Nafid. You have proven your worth. By replacing the book, you have done the last work. I am glad with you. You have saved the mankind from the curse of this book. What I could not do, you have finished it. Thanks to you again.

কিন্তু এটা কে বলল? তাকে তো দেখা যাচ্ছে না। যাইহোক, আমি কোনো প্রত্যুত্তর করলাম না। কে বলল তা নাহয় আমার কাছে অজানাই থাক!!!!!

কাহিনী শেষ

ছবি গ্যালারি










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)