প্রিয় লিনলিউড,
আজ আট বছর পরে আবার তোমার কাছে লিখছি। আশা করি ভালো আছ। আবার নাকি গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছ। যাইহোক। তোমাকে বলেছিলাম আমার পরিবারের রহস্য সম্পর্কে, নিশ্চয়ই মনে আছে, সেই মুকুট। ওটা এখন আমার প্রয়োজন। তাই আমি ওটা ডেভিলউডে খুঁজতে যাচ্ছি। তোমাকে পেলে ভালো হতো। জানিনা কোথায় আছ। এটাও জানিনা আমার চিঠি তোমার কাছে পৌছাবে কিনা। তবুও সম্ভাব্য ঠিকানায় পাঠালাম। তুমি থাকলে কাজটা সহজ হতো। তবুও। আমি একাই যাচ্ছি। যদি মুকুটটা পাই তবে তোমায় চিঠি লিখবো। আর যদি না পাই তবে আর আমার চিঠির জন্য অপেক্ষা কোরো না। আমি হয়তো তোমাকে চিঠি লেখার জন্য সশরীরে উপস্থিত নাও থাকতে পারি।
ইতি তোমারই,
ওলসন
চিঠিটা পড়ার পরেই কেমন যেন হয়ে গেলাম। হাত পা থরথর করে কাপতে লাগল। দু-একবার বমিও করলাম। আমি জানতাম ওলসন খুবই সাহসী একজন মেয়ে। তবুও ওদের পারিবারিক রহস্য সম্পর্কে এককালে যে বর্ণনা ওলসন করেছিল তা শুনেই তখন আমার রক্ত হিম হয়ে যায়। এখন এতদিন পর ওলসন আমার কাছে চিঠি লিখেছে। আবার চিঠিতে বলেছে ও নাকি একাই ডেভিলউডে যাচ্ছে। তখন আর আমার বসে থাকা চলে না। প্রাণের বন্ধু ওলসনকে বাঁচাতে আমি তখনই বেরিয়ে পড়লাম।
ওডিসি নদী। নদীর দুপাশে ওলসনদের দুটো বাড়ি। আমি যেদিকটায় থাকি সেখান থেকে গেলে ওলসনদের ন্যাটিভ ভিলা আমার চোখে পড়ে। ডেভিলউডের কাছে ওলসনদের অন্যবাড়ি অর্থাৎ সিভিল হোম নদীর অপর পাশে। তাই সেখানে যেতে হলে আমাকে নদী পার হতে হবে।
আমি বর্তমানে লোকালয় থেকে ২৫ কিমি দূরে। কারন ওলসনের বাবার ইচ্ছা ছিল এই যে তিনি লোকালয়ে থাকবেন না। তার ফলেই এত নির্জনে বনের মধ্যে তাদের বাস। আমার বাবা ওলসনের বাবার বন্ধু ছিলেন। তাই আমাদের বাড়িও সেখানে ছিল। গত ৮ বছর আগে ব্যবসায় উন্নতির ফলে আমাদেরকে লোকালয়ে ফিরে আসতে হয়। সেই থেকে ওলসনদের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আসার ২ বছরের মাথায় আমার বাবা-মার আকস্মিক মৃত্যু হয়।
এখানে একটা রহস্য আছে যেটা তোমরা অনেকেই ধরতে পেরেছ, আবার কেউ কেউ পারোনি। সেটা হলো, আমি উল্লেখ করেছি আমার বাবার ব্যবসা ছিলো। তোমাদের মনে নিশ্চয়ই সন্দেহ হচ্ছে যে, এত দূর বাস করে তো ব্যবসা করা সম্ভব না। আচ্ছা, তোমাদের সেই কৌতুহলও মিটিয়ে দিচ্ছি। (অবশ্য শুনলে তোমাদের অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে) আমার পিতামহ একজন বড় আবিষ্কারক ছিলেন। তিনি এমন একটা যন্ত্র বানান যেটাতে বসে কয়েক ঘন্টার পথ কয়েক সেকেন্ডে পাড়িদেওয়া যেত। হয়ত আমি টেলিপোর্টিং মেশিনের কথা বলছি। যাহোক গল্পে ফিরে আসি।
এবার আমি নৌকা পাব কোথায়? আগে জানলে নাহয় নৌকা নিয়েই আসতাম। কিন্তু এত চিন্তার মধ্যে এসেছি যে ওলসনদের বাড়ির এই অবস্থার কথা আমার মনে ছিল না। কিন্তু নদী আমাকে পার হতেই হবে।
অনেক ভেবেচিন্তে ন্যাটিভ ভিলা পর্যবেক্ষনে নেমে পড়লাম। যদি নদী পার হওয়ার মত কিছু পাই! বাড়িঘরের অবস্থা দেখে ঠাওর করলাম যে ওলসন বা তাদের বাড়ির কেউ কয়েক বছর ধরে এখানে আসে না। একান্তে হানাবাড়িও বলা চলে। এ বাড়ির একটা ঘর বাদে সব ঘরের অবস্থা ধুলিসাৎ। এ ঘরটাও শ্যাওলা-আগাছা দিয়ে ভরা। অনেক খুঁজে দরজা বের করলাম। তবে দরজা খোলার জন্য দরকার একটা কোড। অনেক্ষন চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুতেই কিছু না। বাড়ির তিনদিক পর্যবেক্ষন শেষ। পাওয়ার মতো বলতে পেয়েছি একটা লাঠি। নদীর দিকে যেতেই আমার আনন্দ ধরে না। একটা নৌকা দেখলাম।
তবে খুশিটা তৎক্ষণাৎ নিভে গেল। কারন নৌকায় বৈঠা নেই। তবে বানাতে অসুবিধা কি!
নৌকা পর্যবেক্ষনে লেগে গেলাম। পেলাম এক গোছা দড়িআর এমন একটি জিনিস যা দেখে আমার খুশি আবার জ্বলে উঠলো। নৌকার কাঠে খোদাই করা ৪টি সংখ্যা।
ব্যাস, আর কি? ৪টা কোড দরজায় বসালাম। দরজা গেলো খুলে। তবে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। ঘরে বেশি কিছুই নেই। আমারও তেমন কিছু প্রয়োজন নেই। শুধু চাই চেপ্টা মতোন একটা জিনিস। পেয়েও গেলাম মনের মতো। ভগ্নাবশেষের মধ্যে পড়ে আছে একখানা আয়তাকার সীসার পাত। এতো নরম যে হাত দিয়েই বাঁকানো যায়।
পাতের ওপরদিকটি লাঠির মাপে বেঁকিয়ে দড়িদিয়ে ভালো করে বাধলাম। হয়ে গেল আমার নৌকার বৈঠা…না মানে বৈঠার মতো একটা জিনিস। আর কী চাই? চলে গেলাম সিভিল হোম।
আমি দাঁড়িয়ে আছি। যেখানে আছি সেখানে তিনমাথার রাস্তা মতোন। একটা দিয়ে আমি এলাম। দ্বিতীয়টা দিয়ে সিভিল হোম দেখা যায়। তৃতীয়টা দিয়ে দেখা যায় ডেভিলউডের গেট। আমি প্রথমেই সিভিল হোমসের দিকে যেতে চাইলাম। তাই ই করলাম। তবে গিয়ে দেখি ঘরে তালা।
আশেপাশে অনেক খুঁজলাম। কিন্তু কোথাও কিছু নেই। তাই আমি ডেভিলউডের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। তবে তার আগে যেখনে আছি সেখান সম্পর্কে তোমাদের পরিষ্কার বর্ণনা জানাই।
সিভিল হোম আর ডেভিলউড বেশ কাছাকাছি। মাঝখানে মাত্র দশ হাত মতোন জায়গা। জায়গাটা পূরণ করে আছে একটা বিশাল পুকুর। আসলে আমি যেটাকে তেমাথা বলছি, আসলে রাস্তাটা ডেভিলউডের দিকেই গেছে। আর সিভিল হোম পুকুরের মধ্যে চরের ওপর হওয়ায় একটা কাঠের তৈরি ব্রীজের মত সেখানে গেছে। সাঁকো অর্থাৎ ব্রিজের পাশ দিয়ে বেশ কয়েকটা মশাল লাগানো। আগুনটা জ্বলছে।
সিভিল হোমের পাশে একটা আগুন ধরানোর জায়গা। আমি আগুন ধরানোর জায়গা এজন্য বললাম কারন সেখানে কয়েকটা শুকনা ডাল আধপোড়া অবস্থায় সাজানো ছিল। আর দেখলাম পুকুরের মধ্যে একটা কাঠ পোতা আর একটা কাঠ আড়াআড়িভাবে আটকানো। অনেকটা যিশুখ্রিস্টের ক্রুশ চিহ্নের মত।
আর যেটা বিশেষ নজরে এলো সেটা হলো পুকুর পাড়ে একটা গাছ। যার কোটরে বাসা বানিয়ে একটা কাক বসে আছে। তিনটা ডিম সেখানে। দুটো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তৃতীয়টিতে কাকটি তা দিতে রত। ফাঁকফোকর দিয়ে দেখলাম ডিমটা সাদা নয়, সোনালী রঙের।
যাইহোক, আমার বর্ণনা এ পর্যন্তই। এবার কাজ শুরু। গেটের কাছে গেলাম। খাসা একখানা গেট বলতে হবে। যদিও লোহা দ্বারা তৈরী, তবুও দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন হাড় দ্বারা তৈরী। আমি পর্যবেক্ষনে নেমে পড়লাম। গেটের মধ্যেখানে খোদাই করা একটা মাকড়শার চিত্র। পাশে একটা চাবি ঝুলানো।
চাবিটা দিয়ে খুললো সিভিল হোমের তালাবদ্ধ দরজা। আমি ভেতরে গেলাম।
ভেতরে ঢুকতেই আমি অবাক। ভেবেছিলাম বাহিরের পরিবেশ পরিবর্তন হলেও ভেতরের পরিবেশ ততটা পরিবর্তন হবে না। কিন্তু ভেতরের আমি কিছুই চিনি না। অথচ ছোটবেলা থেকে এবাড়িতে কতবার যে এসেছি তার ইয়ত্তা নেই। অবশ্য ৮ বছরে বেশ পরিবর্তন ঘটে গেছে। যে সিভিল হোম আগে ডেভিলউডের ১০০ হাত দূরে ছিল এখন সেটা ১০ হাতের ভেতর চলে এসেছে।
যাইহোক সেদিকে আর না যাই। সামনে যাওয়া যাক।
ঘরের একপাশে উঠেগেছে। সিড়ির পাশে একটা টেবিল। টেবিলের ওপর ছবি আকা আর চার যায়গায় গোল করে কাটা। হয়তো কিছু বসাতে হবে। আর পাশে একটা দরজা। তার ভেতরে কি আছে তা পরে বলছি। দরজার পাশে একটা ফায়ারপ্লেস। ফায়ারপ্লেসের ওপর একটা ছুরি ঝোলানো। তার ওপরে বড় গোল একটা কয়েন মতো। কয়েনের ওপর চাঁদ খোদাই করা।
দরজা দিয়ে ভেতরে গেলাম। সেখানে দেখলাম একটা টেবিল যার ওপর কয়েকটি জিনিস রাখা। সেগুলো হল একটা বড় পাত্র, একটা রুটি বেলার ডান্ডা, একটা ছেঁড়া ব্যাগ। সবকিছু নিলাম। একটা ব্রিফকেস দেখলাম। সেটা খুললাম। পেলাম সুইসুতা এবং একটা চাবি। আর একটা জিনিস নজরে পড়ল সেটা হল দেয়ালে কয়েকটি তীর-ধনুক বিভিন্ন দিকে মুখ করা।
আমি বেরিয়ে আসলাম। সিড়িদিয়ে ওপরে উঠলাম। ওপরে গিয়েই সামনে নজরে পড়লো দুটো দরজা, একটা জানালা। দরজা দুটির একটি সামনে আর একটি পাশের দেয়ালে। তবে পাশে দেখলাম কাটাকুটি খেলার ঘর। যার ৯টি ঘরে কাটাচিহ্ন ও গোল চিহ্ন দেওয়া।
জানালা দিয়ে দেখলাম একটা নিক্তি। জানালা দিয়ে দেখলাম একটা নিক্তি। ওপর সূর্য খোদাই করা।
ব্রিফকেসে যে চাবি পেয়েছি তা দিয়ে পাশের দেয়ালের ঘরের তালা। আমি ভেতরে গেলাম।
ভেতরে একটা খাট, একটা চেয়ার, একটা বাতি, একটা ফায়ারপ্লেস, একটা তৈলচিত্র আর একটা বাক্স দেখলাম। ফায়ারপ্লেসের ওপরে অদ্ভুত একটা জিনিস দেখলাম।
দেখি ৪টা মূর্তি তীর ধনুক হাতে দাড়িয়ে আছে। এটা দেখেই আমার নিচের ঘরের দেয়ালের তীর ধনুকের কথা মনে পড়লো। দিলাম সাজিয়ে। নিচ থেকে একটা ঢাকনা খুলে গেলো। পেলাম একটা থলে। ছুরি দিয়ে থলে কেটে ফেলতেই ভেতরে পেলাম একটা কয়েন যার ওপর ড্রাগনের ছবি আকানো। যে বাক্স পেলাম তার ওপর নয়টি খোপ করা ছিল। আমার মনে পড়লো কাটাকুটি ঘরের কথা।
গোল চিহ্নের ঘর গুলো আঙুল দ্বারা চেপে দিলাম। বাক্সটা খুলল। আর ভেতরে পেলাম আরেকটি কয়েন যেখানে আগুন খোদাই করা ছিল।
দেয়ালের তৈলচিত্রটা ভালো করে দেখে নিলাম।
আমি চারটি কয়েন পেয়ে গেছি। মনে রেখ কয়েন কিন্তু গোল হয়। তাই আমি নিচে এলাম। টেবিলের কাছে গেলাম। সেখানে ৪টা গোল খোপ করা আছে আগেই বলেছি। আমার সন্দেহ হয়েছিল যে নিশ্চয়ই এখানে গোল কিছু বসাতে হবে। সেগুলো আর কিছু না, এই গোল কয়েনগুলো। কিন্তু কোথায় কোন কয়েন বসাবো সেটা এক সমস্যা। এটা সমাধান করলাম তৈলচিত্রটা দেখে।
কয়েনগুলো বসানোর পরে টেবিলের ড্রয়ার খুলে গেল। বেশ বড় ড্রয়ার। ভেতরে একটি চাবি পেলাম। সেই চাবি দিয়ে খুলল ওপরের সামনের দরজাটি। ভেতরে গেলাম।
ঘরে ঢুকেই নজরে এলো আরো দুটো দরজা, একটা সিন্দুক,আর একটা চেয়ার। দরজা দুটোর একটা খোলা অসম্ভব, আরেকটা খোলাই ছিল। ওটা দিয়ে ভেতরে গেলাম।
এটা ছিল স্টোররুম। ঘরের যাবতীয় আজেবাজে জিনিসপত্রে ভর্তি। সিলিং এর ওপর একটা পর্দা লাগানো দেখলাম। পর্দার তলে কি আছে তা দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। পাশে একটি মই পড়ে ছিল। মইটা দেয়ালে লাগালাম। ছুরি দিয়ে পদার্টা চিরে দিলাম। কোনো উপায় ছিল না। ভেতরে যা দেখলাম আমি তা চিন্তাও করিনি।
একটা গোপন ঘরের দরজা। কোনো মতেই নাগাল পাচ্ছিলাম না। হাতের কাছেও ঠেলা দেওয়ার মত কিছু নেই। কাজে লাগলো রুটি বেলার ডান্ডাটা। দিলাম ঠেলা। দরজা গেল খুলে। এবার মই থেকে নেমে মইটা গোপন ঘরের দরজার সাথে স্থাপন করলাম। তারপর গোপন ঘরে প্রবেশ করলাম।
ভেতরে বেশ কয়েকটা ড্রাম ছিল। যার ওপর একটা টুপি পেলাম। আর ছিলো একটা বাক্স। ওটার গায়ে একটা নকশা আঁকানো ছিল। এলোমেলো চাকতি। আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঠিক করতে হল।
বাক্স খুলে গেল। ভেতরে আরেকটা বাক্স। সেটা খুলতে সমস্যা হলো না। দেখি ভেতরে আছে ডেভিলউডের গেটে যেমন একটা মাকড়সা খোদাই করা ছিল, এখানেও তেমনি একটা মাকড়সা খোদাই করা। একই মাপের, একই আকারের। এবার কি করি?
মাথার মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। অনেকক্ষণ ভাবলাম। শেষে ভাবনার সাথে উত্তরগুলো মিলিয়ে নিলাম। ভাবনাটি আমি নিচে তুলে ধরছি।
এই যে বাক্সে মাকড়সার ছাপ, এতে ছাপ দিয়ে একটা মাকড়সা বানাতে হবে। যা দিয়ে মাকড়সা বানাবো, তা আর কিছুই না, সেই সোনালী ডিমটা। কাকটিকে যেভাবেই হোক ফাঁকি দিয়ে আমাকে ডিমটা নিতে হবে। তবে আস্ত ডিম দিয়ে তো আর চাপ দেওয়া যাবে না। তাই ডিম গলানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর ছাপ দিয়ে ডেভিলউডের গেটে বসিয়ে দেবো। তারপর যা হবে দেখা যাবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার প্রথম কাজ ডিম নিয়ে আসা। অনেক চেষ্টা করলাম। তবে কার সাধ্য কাক টাকে ফাঁকি দিয়ে ডিম নিয়ে আসে? চিন্তা করলাম, এবার মুখোমুখি যা হবার হবে। তবে খানিকক্ষণ চেষ্টা করে যা বুঝলাম, তা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। এই কার্ডটা অন্য কোন কাকের মত সাধারন পাখির না। তাই আমাকে বুদ্ধি বদলাতে হবে।
ভাবতে ভাবতে নজরে এলো পুকুরে সেই ক্রশ চিহ্নের কথা। ওখানে একটা কাকতাড়ুয়া বানালে কেমন হয়? হ্যাঁ বেশ হয়! এটাই করতে হবে। লেগে পড়লাম কাকতাড়ুয়া বানানোর কাজে।
প্রথমে নিচের ঘর থেকে পাওয়া ছেঁড়া ব্যাগ সুঁই-সুতা দিয়ে সেলাই করলাম। সে যা কঠিন কাজ! লাগলো ১০ মিনিট। যে মানুষ জীবনে কোনদিন সুঁই-সুতা ছুঁয়েও দেখেনি, সে নিশ্চয়ই এর চেয়ে কম সময়ে আধ হাত পরিমাণ জায়গা সেলাই করতে পারবেনা।
খানিকটা খড় ছিল। সবটুকু এনে ব্যাগে বললাম। তৈরি হলো কাকতাড়ুয়ার দেহ। ওটা নিয়ে আসলাম।
তবে সিন্দুক খুলতে যা ঝামেলা, আধা ঘন্টা লেগেছিল। এক পর্যায়ে মনে হল ছেড়ে দিই। কিন্তু ধৈর্যের উপর ভর করে ঠিকই পারলাম। তবে কিভাবে পারলাম তা লিখে প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা আমার নাই।
স্টোর রুমে একটা ড্রামের উপর একটা স্টিলের মূর্তির মাথা আছে। সেটা নিলাম। আর গোপন ঘরে যে টুপিটা আছে, সেটা নিলাম। সবগুলোকে লাগিয়ে দিলাম। আর আমার কাকতাড়ুয়া সম্পূর্ণ। কাকতাড়ুয়া লাগাতেই কাকটি উড়ে পালিয়ে গেল। আমি ডিমটা দিলাম।
এবার ডিম গলাতে হবে। নিচের ঘরে পাওয়া পাতিলটা কাজে লাগলো। সিভিল হোমের বাইরে আগুন ধরানোর যে জায়গা আছে, সেখান থেকে পাতিলটা বসালাম। এবার একটা ডাল নিলাম। তারপর মশাল থেকে ডালটিতে আগুন ধরিয়ে দিলাম। সেই আগুন পাতিল বসানোর জায়গায় ধরিয়ে দিলাম। পাতিলটা খানিকক্ষণ গরম হতে দিলাম তারপর ডিমটা ছেড়ে দিতেই গলে গেল। তারপর গলিত ডিম পাতিল সমেত গোপন ঘরে নিয়ে গেলাম। বাক্সটি খুলে, মাকড়সার ফরমার মধ্যে ঢেলে দিলাম সব তরল। এবার বাক্স আটকে চাপ দিলাম। তারপর আবার খুলতেই সোনালি মাকড়সা পেয়ে গেলাম।
তারপর শেষ কাজ। মাকড়সা নিয়ে ডেভিলউডের গেটের কাছে নিয়ে গেলাম, মাকড়সাটিকে যথাস্থানে বসিয়ে দিলাম।
আমি ডেভিলউডে করে ঢুকে পড়েছি। চোখের সামনে শুধু জঙ্গল। একটা রাস্তা গেছে তার মধ্য দিয়ে। সেখান দিয়ে একটু এগোতেই রাস্তার পাশে একটা কুয়া দেখলাম। কুয়ার উপর একটা বালতি, আর পাশে একটা দড়ি পড়ে আছে। পানি পান করার কোন ইচ্ছা নাই। তাই সামনে এগিয়ে গেলাম।
খানিকদূর গিয়েই দেখলাম দুটো রাস্তা। আমি যে রাস্তা দিয়ে এলাম তারই শাখা রাস্তা এই দুটি। যথারীতি তেমাথা। এই তেমাথার সংযোগস্থলে পড়ে আছে তিনটা ডায়মন্ড বা হীরা। সাদা রঙয়ের। তিনটাই তুলে নিলাম। তোমরা আবার আমাকে লোভী মনে কোরো না। আমি নিজের জন্য মোটেই হীরা নিইনি। পরে যদি কোনো কাজে লাগে এই ভেবে নিয়েছি।
বামদিকের শাখারাস্তা ধরে এগোতে লাগলাম। কিছুদুর যাবার পর দেখলাম রাস্তা শেষ, দুটো বাড়ি। একটা একেবারে নাকের ডগায় একটা, আরেকটা একটু দূরে। নাকের ডগায় যে বাড়িটা আছে সেটা বাড়িনা গাছ কিছুই বলা যায় না। আর অন্যবাড়িটার দরজা একেবারে গোল।
আমি প্রথমে গাছঘরে গেলাম। দরজায় টোকা মারতেই ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, "তুমি কে এবং কেন এখানে এসেছ?" আমি উত্তর দিলাম, "স্যার, আমি লিনলিউড। আমার বন্ধু ওলসনকে উদ্ধার করতে আমি এখানে এসেছি।"
ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, "ও লিনলিউড। আমি জানতাম তুমি আসবে। এসো, ভেতরে এসো।"
আমি ভেতরে গিয়ে দেখি একটা চরম বৃদ্ধ লোক একটা চেয়ারে বসে আছে। আমি ভেতরে ঢুকতেই তিনি বললেন, "বোসো।"
তারপর আমাদের মধ্যে সব কথা হলো। কিভাবে আমি সব পাজেল অতিক্রম করলাম সব বললাম। সব শোনার পর লোকটা বলল, যা যা তুমি বললে তা যদি সব সত্যি হয় তবে নিঃসন্দেহে তুমি তুমি একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা। বাকি যা পথ আছে তাও তুমি অতিক্রম করতে পারবে আমার সাহায্য ছাড়াই। কিন্তু আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তাহলে আমার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে। তুমি কি আমার সাহায্য চাও?
আমি বললাম, অবশ্যই। কিন্তু আপনার এই প্রায়শ্চিত্তের ব্যাপারটা কী?
বৃদ্ধ বললেন, সেটা তুমি যথাসময়ই জানতে পারবে। আর আমার সাহায্য নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার নাম ওথোন। তুমি আমাকে ওথোন দাদু বলেই ডাকবে। আর একটা কথা আমি এই বাড়ির বাইরে যেতে একেবারেই অক্ষম। তাই আমি শুধু বলে দেব, আর বাদবাকি সবকিছু তোমার নিজেরই করতে হবে।
ওথোন দাদুর পরামর্শমতো এই ঘরের একটা তাকের অপর চারটি লিকুইডের শিশি পেলাম। ১মটা সাদা, ২য়টা সবুজ, ৩য়টা লাল আর ৪র্থটা নীল। দাদু বললেন, এতে পানি মেশাতে হবে। তবে সাধারণ পানি নয়। ডেভিলউডে ঢোকার পথে নিশ্চয়ই কোনো কুয়া তোমার চোখে পড়েছে। ওই কুয়ার পানি আনতে হবে। গেলাম কুয়ার কাছে। বালতির সাথে দড়িবেধে তুলে আনলাম পানি। তারপর মিশিয়ে দিলাম। লিকুইড গুলো যেন চকচক করে উঠলো।
আবার গাছঘরে গেলাম। আর কি কি করলাম তা হুবহু দাদুকে বললাম।
দাদু বললেন, নিশ্চয়ই তুমি তিনটা হীরা পেয়েছ। এখন এই লিকুইড দিয়ে সেই হীরা গুলো রঙ করতে হবে। তবে আগেই রঙ করা যাবে না। তার আগে তোমাকে একটা জায়গায় যেতে হবে। আমার বাড়িথেকে বের হয়ে দুটো রাস্তা। একটায় তুমি এসেছ, আর ২য়টাতে তুমি হয়তো যাওনি। এবার চলে যাও। রাস্তা শেষ হয়েছে একটা বাড়িতে। আমার বাড়িযেমন ট্রি-হোম, ওই বাড়িটা তেমনি রাউন্ড ডোর হোম ৷ দেরী কোরো না। এখনই যাও।
দাদুর বাড়িথেকে বের হয়েই দেখা যাচ্ছে রাউন্ড ডোর হোম। চলে গেলাম ওখানে। দাদুর পরামর্শমত মেইলবক্সে চাবি রাখা আছে। মেইলবক্স খুলতে আবার একটা পাজেল ঠিক করতে হল। চাবি পেয়ে গেলাম। দরজা খুলে গেলো। আমি ভেতরে গেলাম।
ভেতরে অনেক কিছু দেখলাম। একটা বীভৎস লোকের ছবি দেখলাম। তার বাম চোখের মণির জায়গায় একটা লাল রত্ন বসানো। ডান চোখ ফাকা। আর একটা টেবিল, একটা কোড লাগানো বাক্স, আর একটা সাদা ক্যালেন্ডার।
এখানে ওথোন দাদুর পরামর্শ হলো টেবিলে পাব একটা বিশেষ তরল। যেটা ক্যালেন্ডারের ওপর ছিটিয়ে দিলেই পাব চার সংখ্যার একটা কোড। সেটা বসাতে হবে ঐ বাক্সের ঢাকনায়।
যা যা বললাম সবকিছু করলাম। বাক্সের ভেতরে পেলাম একটা নীল রত্ন। সেটা বসালাম বীভৎস লোকটার ডান চোখের মণিতে। তখন যা দেখলাম তাতে আমার বুকের ভেতরে ধড়াস করে উঠলো।
দেখলাম লোকটি কথা বলা শুরু করেছে। সে বলল, ”যে আমার ডান চোখ ফিরিয়ে দিয়েছে তার একটি প্রিয় জিনিস তার কাছে ফিরে আসবে। বলেই সে হাঁ করলো আর গোলাকার একটা কাচ দেখতে পেলাম। আমি কাচটা নিলাম।
তারপর আমি আর সেখানে নেই। একদৌড়ে দাদুর কাছে। দাদুকে কাচটা দিলাম আর সবকিছু খুলে বললাম। দাদু বললেন, চিন্তার কোনো কারন নেই। ঐ লোকটা আর কেউ নয়, আমার বড় ভাই মিথোন। যাক, সেটা কথা নয়। এবার আমি যেটা বলব সেটা মন দিয়ে শুনবে।
এবার তুমি ফিরে যাবে সেখানে যেখানে তিনটা হীরা পেয়েছিলে। অর্থাৎ তিনমাথা। একরাস্তা দিয়ে তুমি ডেভিলউডে এসেছ, আর একটা দিয়ে আমার কাছে। এবার বাকিটা দিয়ে যেতে হবে তোমায়। সামনে পাবে একটা রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদের দ্বারে দেখবে ৫টা সাংকেতিক অক্ষর খোদাই করা। অক্ষরগুলোর নিচে হীরার আকারে খোদাই করা আছে। সম্ভবত ১ম ও ৫ম অক্ষরের নিচের খোদাইয়ে দুটো হীরা বসানো আছে। অক্ষরগুলোর রং যেমন, হীরাগুলোরও ঠিক একই রং। মাঝের তিন অক্ষরে কোনো রঙও নেই, কোনো হীরাও নেই। তোমাকে ঐ অক্ষরগুলোর ওপর এই কাচ ধরতে হবে। তাহলেই তাদের রং ফুটে উঠবে। সেগুলো দেখে এসে আমাকে বলবে।
চলে গেলাম একেবারে রাজপ্রাসাদে। যা দেখলাম সত্যিই তাই। গেটের একটা ঢাকনার ওপর ওগুলো। আমিও যথারীতি কাচ ধরলাম। আর অক্ষরগুলোর রঙ ফুটে উঠলো।
২য় = বেগুনি, ৩য় = কমলা, ৪র্থ = গোলাপি।
আবার গাছঘরে ফিরে এসে সবকিছু বললাম দাদুকে। দাদু সবকিছু শুনে আমাকে একটা বাক্স আনতে বললেন যেটা ছিল আরেক ঘরে। বাক্সটা আনলাম। বের হল একটা মেশিন মতোন। দাদু সেটা ব্যবহার করে তরল দিয়ে হীরাগুলো রঙ করলেন। বিদায় নেওয়ার সময় এসে গেলো। ওথোন দাদুর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বললাম, চিন্তা করবেন না দাদু। ওলসনকে খুজে বের করেই আমি আপনাকেও এখান থেকে নিয়ে যাবো। দাদু তখন কিছু না বলে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন।
আবার রাজপ্রাসাদে গেলাম। বসিয়ে দিলাম ৩টা হীরা। দরজা খুলে গেলো। আরও অন্ধকার। এগোতে লাগলাম। হঠাৎ পায়ে কি যেন একটা ঠেকলো। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলাম। উঠে দেখি যা বেঁধে পড়ে গেছি তা আর কেউ নয়, আমার ওলসন।
পাশে কি একটা জ্বলজ্বল করছে। তারই আলো পড়েছে ওলসনের মুখে। তাতেই চিনতে পেরেছি ওকে। পাশেই এক বালতি পানি। ছিটিয়ে দিলাম মুখে। সে চোখ খুললো।
উঠে তো আমাকে চিনতে পারে না। অন্ধকার তো। তাই নামটা বলতে হলো। তবু ওর সন্দেহ যাচ্ছে না। ওর মুখ দেখে বুঝলাম। ঠিকরে আলো ওর মুখে পড়েছে। তাই আমি ওকে দেখছি। কিন্তু আমাকে দেখবে কে?
ওর হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এলাম। বাইরের সামান্য চাঁদের আলোয় আমাকে দেখে ওর তো পাগল পাগল অবস্থা, জড়িয়ে ধরল। দুজন বেরিয়ে এলাম ডেভিলউড থেকে।
ওলসন আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ৭ কিমি উত্তরে হাঁটতে হলো। পেয়ে গেলাম পাকা রাস্তা। তোমাদেরকে হয়তো বলা হয়নি যে, ডেভিলউডে কখনো সকাল হয়না। তাই পাকা রাস্তায় উঠে সূর্যের দেখা পেলাম। তাও প্রায় ডুবুডুবু। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ভাগ্য ভালো একটা ট্রাক যাচ্ছিল। দাঁড় করালাম। ড্রাইভার বলল মিউটগেট যাচ্ছে। আমার বাড়িও তো সেখানে। উঠে পরলাম।
তারপর শুরু হল গল্প। ওলসন বলে যাচ্ছে আর আমি আর ড্রাইভার আগ্রহ ভরে শুনছি। ট্রাকের ভেতরেই নাস্তা করলাম। গল্প বলতে এই যে কিভাবে ওলসন ডেভিলউডে গেল, কিভাবে মুকুট নিলো, পা হড়কে পরা গেলো, মুকুট ভেঙে গেল, ও অজ্ঞান হল ইত্যাদি ইত্যাদি।
ইতোমধ্যে একদিন কেটে গেছে। পেড়িয়ে এসেছি ২০ কিমি। হঠাৎ একটা জিনিস মনে হল আমার। আর তাতে নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে হলো।
ব্যাপারটা হলো ওথোন দাদু। তাকে তো ডেভিলউডেই ফেলে এসেছি। সেই ২০ কিমি দূর। ড্রাইভার কি আর যাবে? ড্রাইভার অবশ্য যেতে চেয়েছিল, কিন্তু বাঁধ সাধলো ওলসন সকল কথা শুনে। কেন জিজ্ঞেস করায় সে বলল, শোনো তাহলেঃ
আমার দাদুর দাদুর নাম ছিলো ওথোন।
ওথোন ~~~ ওলডন ~~~ ওলফোন ~~~ ওড্রোন ~~~ ওলসন
মিথোন দাদু আর ওথোন দাদু দুই ভাই। মিথোন দাদু ছিলেন বড়, আর অথোন দাদু ছোট। আমি ওথোন দাদুর বংশের। মিথোন দাদু খুব নরম মনের মানুষ ছিলেন, যদিও তার চেহারা ছিল ভয়ংকর। তার চরিত্রে খুশি হয়ে ডেভিলউড রাজ তাকে একটা উপহার দিয়েছিলেন। সেই উপহারটা ছিল যে মিথোন দাদু যেকোনো ১০০টি লোকের ১০০টি ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন। মৃত্যুর ৫ বছর আগে তিনি ৯৯টি ইচ্ছাপূরণ করেন। কিন্তু শেষ ৫ বছরে ঐ শেষ ইচ্ছাপূরণ করেননি। আমি আজও ভাবি কেন তিনি সেটা করলেন না।
আর ওথোন দাদু? তিনি তো ছোটবেলা থেকেই দুষ্টু। মারা যাওয়ার আগে তিনি বড় রকমের একটা অপরাধ করেছিলেন। তাই দৈত্যরাজ তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত না করেই তিনি মারা গেছেন। শুনেছি মারা যাওয়ার আগে নাকি অনেক সুযোগ এসেছিলো। কিন্তু তিনি গ্রহণ করেননি। আমি এটাও ভাবি তিনি কেন এটা করলেন না।
ওলসনের দুটো প্রশ্নের উত্তর আমি পেয়ে গেছি। মিথোন দাদু তার শেষ ইচ্ছাপূরণ সম্পূর্ণ করেছেন। আমি স্বচক্ষে দেখেছি। আর ওথোন দাদু তো আমাকে সাহায্য করেই তার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন। তাকে তো জিজ্ঞেস করেছিলাম প্রায়শ্চিত্তের ব্যাপারে। তিনি বলেছিলেন যথাসময়ই উত্তর পেয়ে যাবো। আমি উত্তর পেয়ে গেছি।
আমরা চলে এলাম আমার বাড়িতে। লাগলো ২ দিন। ড্রাইভারকে বকশিশ দিতে ভুলি নি। বাড়িফিরে ফ্রেশ হয়ে আবার গল্প।
ওলসন আমাকে ভালোবাসতো, আর আমিও ওলসনকে ভালোবাসতাম। ওলসন আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ওর প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল ভাইবোনের মত। ও আমার চেয়ে ৮ দিনের ছোট ছিল। তাই আজীবন ওকে আমি ছোট বোনের মত দেখেছি। তাই ওকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
তবুও আমরা সুখী ছিলাম। কিন্তু আমার মনে হতো কোথাও একটু খামতি ছিল। সেটা পূরণ করলো একটা চিঠি। চিঠি খুলতেই আমি অজ্ঞান। কারন পত্রলেখক আমার বাবা।
তার মানে? তিনি বেঁচে আছেন। স্বাভাবিকভাবেই হোক আর অস্বাভাবিকভাবেই হোক তিনি বেঁচে আছেন। চিঠি পড়ে জানলাম শুধু তিনি নন, মাও বেঁচে আছেন। আমি অবশ্য বুঝে গেছি তাদের বাঁচার কারণ। এটাই হলো মিথোন দাদুর শেষ ইচ্ছাপূরণ। কারণ বিমানে বোমা বিস্ফোরণে মানুষের বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। যাইহোক তারা ফিরে আসলেন। এবার আমাদের চেয়ে খুশি আর কে হতে পারে?
কাহিনী শেষ












