ট্রেন ভ্রমণে মামাবাড়ি (২য় অংশ)

0

বিকাল ৪টা হবে হয়তো।

বেড়াতে বের হয়েছি সবাই। আমাদের গাইড স্বয়ং গোপি। প্রচুর ঘুরলাম। গোপি আমাদেরকে একেবারে সেই জায়গায় নিয়ে গেলো যেখানে আমরা ট্রেন থেকে নেমেছিলাম। খেপুকে নিয়ে পড়েছি মহা ঝামেলায়। মামার বাড়িতে ঠিকই ছিলো। বাইরে যেই বের হয়েছে, আবার হ্যাচ্চো শুরু। বায়ু পরিবর্তন একেবারেই সহ্যই করতে পারে না। কী যে করি!!

যাইহোক, ঘুরতে ঘুরতে একটা পুকুরের কাছে গেলাম। বিশাল পুকুর। শান বাধানো ঘাট। বসার জায়গাও আছে। সেখানে পৌঁছেই বোম একটা ভাষণ ঝাড়লো, Ôহেই পুকুরডা হামার মামার। আর হেই যে পুকুরের পাড়ে বডগাছ দেখতাছ, হেইডাও হামার মামার। তে মামা নাকি সাত পুরুষ ধইর‍্যা এই গাছের মেরামত করে, না মানে দেখভাল করে। আর ঐ যে বডগাছের পিষ্টনে একখান ঘর দেখতাছ, ঐটাও হামার মামার। যখন মাছ ধরতে ধরতে ম্যালা রাত হইয়্যা যায়, তহন মামা বাড়িত না যায়া এইহানে রাত কাটায়।Õ

ঘরটা দেখি ডিজিটাল। দরজায় তালার সাথে সাথে পাসওয়ার্ড চায়। গোপী কোড দিলো। তারপর ঢাকনা খুলে বেড়িয়ে এলো তালা। চাবি দিয়ে তালা খোলা হলো। ভেতরে ঢুকে দেখি ফাইভ স্টার হোটেলের মতো সাজানো। পেঁপে ভাইয়ার উক্তি, Ôফাদার রে ফাদার। এই স্মেল রোমটা এত বিউটি হয়েছে যে একবার ওয়াটচ করলেই মাইন্ড-প্রাইন্ড জুড়িয়ে যায়।

Ôপিপেদা, তুমি আবার ইতালি কবে গ্যালে?Õ

Ôইতালি যাবো হোয়াট করতে? তুই আবার বটগাছের নিচে ইতালি কীভাবে পেলি?Õ

Ôঐ যে রোম লিয়্যা কী যেন কইল্যা? ইতালির রাজধানী তো রোম, নাকি?Õ

Ôরোম! ধুর ফোল, রোম মানে জানিস না? আর, ডবল-ও, এম। রোম। মানে হলো ঘর।Õ

Ôঐডার উচ্চারণ তো রুম হয়। আচ্ছা, ঠিক আছে, হেইডা তো বুঝলাম। কিন্তু মাইন্ড-প্রাইন্ড মানে আবার কী, হেইডা তো বুঝবার পারলাম না।Õ

ন্যাড়া বলল, Ôআমি পু-পু-পু-পুরো বা-বা-বা-বাক্যের অর্থ বলছি। দেখতো বুঝতে পারো কিনা? পেঁপে ভাইয়া বলেছিলো, বাবা রে বাবা। এই ছোট ঘরটা এত সুন্দর হয়েছে যে একবার দর্শন করলেই মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।Õ

গোপি বলল, Ôআরে তোমরা ঝগড়া থামাও তো। চল মাছ ধরি।Õ

আমরা সবাই অবাক হয়ে গোপির দিকে তাকাই। দেখি বাক্স থেকে বের করেছে পাঁচটা বড়শি। সবাই খুব খুশি। কেবল আমি বাদে। কারণটা খুব সহজ। জীবনে কোনোদিন মাছ ধরি নি। এমনকি বড়শির আশেপাশেও যাইনি। এখন তাহলে কীভাবে মাছ ধরবো? অবশ্য আমি যে মাছ ধরতে পারি না, সেই খবরটা দলের কেউ জানত না। তাই মান-সম্মান বাঁচাতে আমাকেও একটা বড়শি নিতে হলো।

গেলাম মাছ ধরতে। সকলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এমন সময় পেঁপে ভাইয়া বলে উঠলো, Ôচল একটা কম্পিটিটিওন হয়ে যাক। আমরা দুটো টেয়াম করবো। টেয়াম এ আর টেয়াম বি। টেয়াম এ তে আমি, নসু আর ন্যাড়া থাকবো। আর টেয়াম বি তে থাকবে বোম, গোপি আর খেপু। অখেই?Õ

প্রতিবাদ উঠলো। গোপির জবাব, Ôনা না, নয়ন ভাইকে চাই। আমরা খ্যাপাদাকে নিবো না।Õ

আর বোম যোগ করলো, Ôহ হ। ন্যাড়াকে দেওন লাগবো। না হইলে তোমরা তিনডা রাঘব বোয়াল হইয়া যাবা।Õ

ঝগড়া প্রায় আরম্ভ হচ্ছিলো। থামিয়ে দিলো ন্যাড়া। সে বলল, Ôবোম ভাই ঠিক ব-ব-ব-বলেছে। এই কম্পিটিটিওন, না মানে compititionআমি থা-থা-থা-থাকবো বি টেয়ামে, না মানে team এ।Õ

আমি মনে মনে বললাম, Ôওয়াহ ওয়াহ, কেয়া স্টাইল হ্যায়!! মনের ভাব যেমন প্রকাশ হয়ে গেলো, তেমনি পেঁপে ভাইয়ার অশুদ্ধ ইংরেজির শুদ্ধ উচ্চারণটাও জানা গেলো।Õ

পেঁপে ভাইয়া বিরক্তিসূচক শব্দ করে বলল, Ôনে নে, তোর স্মাল স্মাল ছেলেপুলে। নে, ন্যাড়াকে তোদেরকেই দিলাম। আর আমার টেয়ামে আমি আর নসুই এনোউঘ (enough)। খেপুকেও লাগবে না। খেপু, তুই হবি জাডজ, মানে বিচারক। কইরে গোপি, টোপ নিয়ে আয়। কতদিন যে ফাইশ ক্যাটচ করি নি।Õ

আমি খানিকটা নিশ্চিন্ত। যাক, পেঁপে ভাইয়া অন্তত মাছ ধরতে জানে। আর এমনভাবে কথাগুলো বলল যেন ওর ফেলা টোপের জন্য মাছগুলো অপেক্ষা করে থাকে। তাহলে আর হামারা জিত রোকেগা কন?

আমি যখনই খুশিতে উৎফুল্ল হতে যাবো, ঠিক তখনই পেঁপে ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এমন একটা কথা বলল, যার ফলে আমার মনে হল যে পেঁপে ভাইয়া যদি আমার চেয়ে বয়সে মুরব্বি না হতো তাহলে আমি এক থাপ্পড়ে ওর বত্রিশ পাটি দাঁত উপরে নিতাম। পেঁপে ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে লাগলো, Ôদ্যাখ নসু, ইভরি কিছু তোর হ্যান্ডে। আমি তেমন ফাইশ ক্যাটচ করতে পারি না।Õ

গোপী টোপ নিয়ে ফিরে এলো। হাতে একটা বাক্স। এইতো টোপ এসে গেছে। বাক্স খুলতেই যা দেখলাম.........

ভেতরে আছে এক প্যাকেট কেঁচো। কিলবিল করছে। এই একটিমাত্র প্রাণী যাকে আমি পৃথিবীর সবকিছুর চেয়ে বেশি ভয় পাই। দেখেই তো আমি ফুস।

পেঁপে ভাইয়া এগিয়ে এলো। বাক্সের দিকে চেয়ে দেখল। তারপরই।

ওরে চাচিইইইইইইইইইইইইইইইইইইই।

বিশাল চিৎকার!! আরেকটু হলে গোপী পুকুরে পড়ে যেত।

সবকিছু স্বাভাবিক হতে লাগল ৫ মিনিট। পেঁপে ভাইয়া বলল, Ôওরে খেপু, ফ্লাওয়ার নিয়ে আয়, ফ্লাওয়ার নিয়ে আয়। কুইক!!Õ

Ôকী বলিলে? ফ্লাওয়ার? ইহার অর্থ হইতেছে পুষ্প। হ্যাচ্চো!! কিন্তু তুমি এই লগণে পুষ্প দিয়া কী করিবে শুনি?Õ

Ôনাহ! পেঁপে ভাইয়ার ইংরেজি ধ-ধ-ধ-ধরার বয়স দেখছি তো-তো-তোর এখনো হয়নি।Õ খেঁকিয়ে ওঠে ন্যাড়া। Ôআরে ভাইয়ার ম---য়দা লাগবে, ময়দা। ময়দার ইংরেজি জা-জা-জা-জানিস তো??Õ

বোম বলে, Ôও, সেইডাই ক। আমিও তো ভাবছিলাম যে, পিপে ভাইয়া এই ভর বিক্যালে ফুল দিয়্যা কী করবি? একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খাওনের লাকান অবস্তা!!!Õ

আমি বললাম, Ôআটা নিয়ে এসো। ময়দার চেয়ে ভালো কাজ দেবে।Õ

Ôদাঁড়াও, আমি আনছি।Õ এই বলে গোপি গটগট করে হেঁটে গেল মামার ঘরে।

তারপর একটা কাঠের পেটরা নিয়ে এলো। ভেতরে আছে পলিথিনে মোড়ানো আটার প্যাকেট। তারপর জিজ্ঞাসা করল, Ôআটা দিয়ে কী করবে নাসির ভাই?Õ

Ôমাছের টোপ ফেলবো।Õ

Ôসে-কি কথা নাসির ভাই!! আটা দিয়ে মাছও ধরা যায়। আগে তো জানতাম না। কারণ বাবা তো কোনদিন আটা দিয়ে মাছ ধরতে বলেনি।Õ

ন্যাড়া সন্ধিঘ্ন চোখে গোপির দিকে তাকায়। তারপর জিজ্ঞেস করে, Ôদাঁড়াও দাঁড়াও, এক মিনিট। মামা য-য-য-যদি আটা দিয়ে মাছ না-ই ধরে, তাহলে মামার এই কুঁড়েঘরে আটা আসলো কোথা থে-থে-থেকে?Õ

গোপির হয়ে আমি উত্তর দিলাম, Ôআরে এটা বুঝলি না? গোপী বলল না যে মাছ ধরতে ধরতে মামা মাঝে মাঝে রাত করে ফেলে। তখন এখানেই তো থাকতে হয়। আর তখন তো কিছু খাওয়ার জিনিস চাই, নাকি?Õ

গোপী আমার কথায় সায় দিয়ে বলল, Ôঠিকই বলেছ, নাসির ভাই। কিন্তু, আরেকবার ভেবে নাও। প্রতিযোগিতা হেরে যাবে কিন্তু। আমি বলি কী, আটা রাখ আর চলো, কেঁচো দিয়েই শুরু করি। পাপ্পু ভাই, তোমার কী মতামত?Õ

Ôআটা দিয়ে মাছ ধরে যে কত চ্যাম্পিয়নকে মিল্ক ওয়াটার খাইয়ে দিয়েছি তা গুণে শেষ করতে পারবি না। আর দেখ না, তোদের মুখেও কেমন ক্যালসিয়াম অক্সাইড আর ব্ল্যাক ইংক মেখে দিই।Õ

আমরা কিন্তু ভাইয়ার কথা কিছুই বুঝতে পারিনি। ন্যাড়া আমাদেরকে বলল, Ôপেঁপে ভাইয়া প্রথমে বললো যে সে মিল্ক ওয়াটার খাইয়ে দিয়েছে, এর মানে হলো ঘোল খাইয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয়টা তো আরো মারাত্মক!! ক্যালসিয়াম অক্সাইড মানে চুন আর ব্ল্যাক ইংক মানে হল কালি। অর্থাৎ, পেঁপে ভাইয়া আমাদের মুখে চুনকালি মেখে দেওয়ার কথা বলছে।Õ

প্রতিযোগিতা শুরু হল। খেপু হলো বিচারক। ও একটু দূরে গিয়ে গাছের ছায়ায় বসবে। আর আমরা এক এক করে মাছ ধরার পর ওর কাছে দিয়ে আসব। যেই দল আগে পনেরোটা মাছ ধরতে পারবে তারাই হবে বিজয়ী।

১০ মিনিট হলো। কারো কোন মাছের দেখা নাই। হঠাৎ ন্যাড়ার বড়শিটা কেঁপে উঠলো। ন্যাড়া টেনে তুলল। দেখা গেল একটা শ্যারল পুটি উঠেছে। গোপী তো মেরেছে দৌড় মাছ নিয়ে। ওদের খাতা খুলল। আমরা এখনো শূন্য। ওরা আমাদের ভেংচি কাটছে। আমি তো জানি আমাদের হার নিশ্চিত। তাই কেবল বড়শি ধরে বসে আছি। তবে ভাইয়াকে অনেক উত্তেজিত দেখাচ্ছে। লোক দেখানোর জন্যই হয়তো।

ন্যাড়া দেখি মাছ পাচ্ছে তো পাচ্ছেই। ওর ৬টা। বোমের ২টা। আমরা এখনো ঘোড়ার ডিম দেখেছি। হঠাৎ দেখি পেঁপে ভাইয়ার বড়শিটা কাঁপছে। ও একা তুলতে পারছে না। আমার আশার আলো জাগলো। যাক, তবু শূন্যতে তো হার মানবো না। আমি গিয়ে ভাইয়াকে সাহায্য করলাম। দুজনে মিলে টেনে তুললাম। তুলে দেখি হাজার তালি লাগানো একটা জুতসই জুতা! আমার শ্রেণির আনন্দপাঠ বইয়ের আলী আবুর অলুক্ষুনে জুতার মতো।

তবে বোমরা ইতিমধ্যে ১২টা মাছ ধরে ফেলেছে। আমাদের দিকে খেয়াল করেনি। তাই অপবাদের হাত থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাঁচিয়ে নিলেন। কিন্তু আমরা তো কোন মাছ পাচ্ছি না। উপরন্ত চৌদ্দ বার আটা লাগাতে হচ্ছে। ফুস করে মাছেরা খেয়ে নেয়। কিন্তু বড়শিতে গেঁথে যায় না। হায় খোদা!! এ কী মুশকিলে পড়লাম!!

গোপী আমাদের দেখছে আর হাসছে। একপর্যায়ে বলল, Ôতোমাদের এলাকার তুলনায় আমাদের এলাকার মাছেরা কিন্তু বেশ চালাক। যাই করো না কেন নাসির ভাই, মাছ কিন্তু অত সহজে ধরা দেবে না। একটু মাথা আর হাতকে কাজে লাগাও। তবেই তো খাতা খুলবে।Õ

আমি মনে মনে বলছি, Ôআমার মধ্যে কী আছে তা তোমরা দেখনি।Õ তারপর পেঁপে ভাইয়ার কানে কানে আমার বুদ্ধিটা বললাম। তা শুনে ভাইয়া আমাকে বলল, Ôতোর ব্রেনে যে এত ইডাইয়া আছে, জানতাম না।Õ এই বলে পেঁপে ভাইয়া ছুটে চলে গেল কাছের একটা দোকানে। কিনে আনল ফেবিকল আঠা। এনে সবটুকু আঠা মেশালো আটার মধ্যে। আঠা আর আটা একসাথে। কাজটা করলাম বিপক্ষের আড়ালে। এবার মাছ, তুই যাবি কোথায়?

যেই-না আটা বড়শিতে লাগিয়ে পানিতে ফেলেছি, অমনি বড়শি নড়ে উঠলো। টেনে তুললাম। উঠেছে একটা চান্দা মাছ। যাইহোক, একটা তো পেয়েছি। বিপক্ষের একটা উঠছে। ওদের ১৩টা। আমাদের ১টা।

আমরা আবার বড়শি ফেললাম। এবার পেঁপে ভাইয়ারটা নড়ে উঠলো। টেনে তুলে দেখা গেল তিনটা মাছ একসাথে উঠছে। আমাদের আশা জাগতে লাগলো। এরই মধ্যে বিপক্ষদল আরো একটা মাছ পেয়েছে। আমাদের ৪টা। ওদের ১৪টা। ওদের লাগে আর মাত্র ১টা। আর আমাদের এখনো ১১টা দরকার। এবার যা করার আমাকেই করতে হবে। বিসমিল্লাহ বলে, হাতে তুলে নিলাম আটা। ওক চিমটি নয়, একটা মার্বেলের সমান নয়, একেবারে একমুঠো আটা নিলাম। বড়শিতে লাগিয়ে পানিতে ফেললাম। আল্লাহ ভরসা।

৬ মিনিট গেলো। এই ৬টা মিনিট যে কীভাবে পার হচ্ছে, তা পৃথিবীর আর কেউ বুঝছে না, কেবল আমরা দুইজন বুঝছি। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, গণিত পরীক্ষার দিনও আমার এই হাল হয় না। সারাজীবন মনে রাখবো এই ৬টা মিনিট। হঠাত সেই সময়......।

আমাদেরটা নড়ে উঠলো। বিপক্ষের টাও নড়ে উঠলো। দুই দলই টেনে তুললাম। দুই সেকেন্ড ব্যবধানে আমরা আগে তুললাম। বোমকে ধন্যবাদ, ওর ভুঁড়ির জন্য ওরা দুই সেকেন্ড পরে তুলতে বাধ্য হয়েছে। আমাদেরটা ভীষণ ভারী ছিল। এবার মনেহয় জুতার গোটা দোকান উঠবে। তাই টেনে তোলার সাথে সাথে আমি আর ভাইয়া চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

ওদিকে বিপক্ষ দলের চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে। বুঝতেই পারছ, ওরা জিতে গেছে। তারপর বোম বলতে লাগল, Ôদ্যাখছ পিপে ভাই, ক্যাবা কইর‍্যা আমরা আগে জিত্যা গেলাম। তোমরা তো.........।

একি!!!! আর কথা বলে না কেন? কী হলো? আমি চোখ খুলে বোমের দিকে তাকাই। দেখি বোম নিজের বড় বড় চোখ দুটো আরো বড় বড় করে আমাদের বড়শির দিকে তাকিয়ে আছে। আশ্চর্য হয়ে আমিও তাকালাম। দেখি বড়শি মাছে মাছে ছয়লাব!!!!! একেবারেই এত!!! ভাবার অতীত!! পেঁপে ভাইয়া চেঁচিয়ে উঠেছে, Ôআমরা উইন উইন, আমরা উইন উইন।Õ

Ôশুধু win না ব-ব-ব-লে er যোগ করে winer বললে ভাল হত। কি-কি-কিন্তু দাঁড়াও, আগে গুনে দেখাও। ১৫টা না হলে কিন্তু আমরাই জি-জি-জি-জিতলাম।Õ

Ôচউন্ট করব না মানে? একেবারে আই তে ফিগার দিয়ে দেখিয়ে দেবো।Õ

Ôচউন্ট নয়, কথাটা হচ্ছে count। আর ফিগার না বলে finger বললে বেশি মানানসই হতো।Õ

বোম বলল, Ôসেইডো তো বুঝল্যাম, কিন্তু Ôআই তে ফিঙ্গার গোটা কতাডার মানে কী?Õ

ন্যাড়া উত্তর দিলো, Ôএকটু হি-হি-হিসাব করো। পেয়ে যাবে।Õ

Ôআই মানে চোখ, আর ফিগার, না না ফিংগার মানে আংগুল। তাইলে আই তে ফিংগার, মানে চোখে তে আঙ্গুল। ও পাইচি, ভাইয়া চোখে আঙ্গুল দেওয়ার কতা কচ্ছে। কিন্তু চোখে আঙ্গুল দিবি কীজন্যে? চোখ টেরা হয়্যা যাবি নানি?Õ

আমি বলে উঠলাম, Ôচোখে সত্যি সত্যি আঙুল ঢুকিয়ে দেবে না রে পাগলা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। ইয়ে এক কাহাওয়াত হ্যা, সামঝে?Õ

গণনা শুরু হলো, আবার নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। কিন্তু নৌকা তীরে এসে ডুব গেয়া। দেখা গেল ওই টোপে দশটা মাছ উঠেছিল। মোট মিলিয়ে চৌদ্দটা। হায়রে আল্লাহ!!! তুমি এটা কী করলে? হারতে যখন হবেই, তখন ৫/৬টা মাছ ধরতে পারলেই হতো। তখন আর এতো আফসোস হতো না। শেষে কিনা শুধু একটা জন্য!!

আমি মন খারাপ করে পুকুরের পাড় দিয়ে হাঁটছি। ওদিকের খবর জানি না। হাতে বড়শি আছেই। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, আটার তাল এখনো বড়শিতে আটকে আছে। ওটা বড়শি থেকে খুলে হাতের তালুর মধ্যে নিলাম। তখন এমন রাগ হচ্ছিলো এই আটার ওপর, মনে হলো এটাকে পিষে ভর্তা বানিয়ে ফেলবো। করলামও তাই। কিন্তু যতই চেষ্টা করি না কেন, চাপতে পারছি না। অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু ভর্তা বানাতে পারছি না। কিন্তু এমন কী হলো? হেরে গিয়ে আমার গায়ের জোর কমে গেছে? নাকি আটার তালের ভেতর শক্ত কিছু একটা আছে?

আমার সন্দেহ ঠিক। ভেতরে একটা ছোট্ট মাছ পাওয়া গেলো। মাছের নাম অবশ্য জানতাম না। অনেক ছোট। কিন্তু আনন্দ হল এটা ভেবে, যে আমরা জিতে গেছি।

আমি ওদের কাছে গেলাম। দেখি পেঁপে ভাইয়া বিমর্ষ হয়ে বসে আছে মাটিতে। আর অন্যরা প্রত্যেকে এক হাত সমান দাঁত বের করে হাসছে। খেপু বক্তৃতা দিচ্ছে, Ôঅদ্য প্রতিযোগিতার বিজয়ী হইল......।Õ

আমি চেচিয়ে উঠে বললাম, Ôদাঁড়াও, দেখো আমি কী পেয়েছি। এই দেখো একটা মাছ। এই মাছ আটার তালের একেবারে ভিতরে ছিল। আমরা কেউ টের পাইনি।Õ

ব্যাপরটা বুঝতে কারো বাকি রইলো না। যেহেতু আমরাই আগে টেনে তুলেছিলাম, তাই আমরাই বিজয়ী হলাম। পেঁপে ভাইয়ার মুখ আগে ৫ এর মতো হয়ে ছিলো। আমার কথা শোনার পর ৫ টা ঘুরে গেছে। খেপু তখন তার বক্তব্য চালালো, Ôএকটা কাকতালীয় ঘটনা ঘটিবার পর, আমি ঘোষণা দিতেছি যে, আজকের বিজয়ী পিপে ভাই আর নসু ভাইয়ার দল। জোরে করতালি।Õ

প্রতিযোগিতার পর্ব শেষ। সন্ধ্যা হয়ে এলো। এবার আমাদের ফেরার পালা। যেতে হবে অনেকটা পথ। মনে হচ্ছে আজান দিচ্ছে। এটা হিন্দুপাড়া। তাই অনেক দূর থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। আমরা বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করলাম।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বাড়িতে পৌছলাম।

আমরা এত পরিমান ক্লান্ত যে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায়। নয়টা পর্যন্ত চরম আড্ডা দিলাম। গোপী অনেকগুলো হাসির কৌতুক জানতো। আমাদের হাসাতে হাসাতে পাগল করে দিয়েছে। সবচেয়ে মজা পেলাম যেটা শুনে সেটা তো বলতে গেলেই হাসি পায়। তবে আমি অন্য একটা বলছি।

গোপীর একটা বান্ধবী ছিল। একেবারেই মিনমিনে। সেজন্য অন্যান্য বান্ধবীদের টিটকারি সহ্য করতে হতো তাকে। একদিন সে ঘুমিয়ে ছিল। সে শুনতে পেল কেউ তাকে বলছে, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ। সেটা শুনে জেগে উঠলো। উঠে দেখল সেটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ভোর হয়ে গেছে। তার ঘরের জানালা দিয়ে আওয়াজটা আসছে। সে গিয়ে জানালার কাছে দাড়ালো। তখন সে দেখল.........

-

-

-

তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে একটা লেবুওয়ালা যাচ্ছে, আর স্টাইল করে বলছে,

অ্যা-----ই-------ল্যাবু--------উউউউউ

হাসতে হাসতে তো আমাদের একেবারে কাহিল অবস্থা।

বোম বলে উঠলো, Ôওরে গোপী ছাড়ান দে, ছাড়ান দে। হাসতে হাসতে আমার প্যাট ফাইট্যা গেলো রে।Õ

খেপুর মন্তব্য, Ôগোপীর কৌতুকগুলোর মাঝে একটা নির্মল হাস্যরস রহিয়াছে।Õ

Ôঠিক আছে। পিপে ভাইয়া, তোমাগো জিতনের বিষয়ডা আমি কিন্তু এহনো বুজি নাই। এইবার এট্টু ভালো কইর‍্যা বুঝায়া কও তো।Õ

পেঁপে ভাইয়া গলায় গাম্ভীর্য এনে বলল, Ôতাহলে লিস্টেন কর। আচ্ছা, তার বিফোরে টেল কর করতো যে হু বড়শি আগে লিফট করেছিলো? উই, তাই না? সো, ওই মোয়াইস্টেরিয়াস ফাইসটা ওই বারই বড়শিতে অ্যারেস্ট হয়েছিলো। সো...Õ

Ôপা ধরিচ্ছি, চুপ করো। মেলা কইছাও। তোমার কতা শুইনা আমি আগে যা বুচ্ছিলাম, এখন তো সেইডোও তালগোল পাকাইয়া গেলো।Õ

তখন ডাক পড়ে গেছে রাতের খাবারের। পেঁপে ভাইয়া Ôগো গো বলেই এমন জোরে দৌড় দিলো যে, মানুষের টয়লেট চাপলেও এত জোরে দৌড়ায় না।

পিছে পিছে আমরাও ছুটলাম। এমন মনে হচ্ছিল যেন খাবার ঘর লক্ষ হাত দূরে। পৌঁছাতেই পারছি না। আবার সেই পুরাতন ছবি। রাশি রাশি খাবারের ওপর রাশি রাশি ঢাকনা। এত খাবার দেখে অন্যদের কী হলো জানিনা, তবে আমার ক্ষুধা বেড়ে গেল। পেঁপে ভাইয়াকে দেখলাম, জিভ তো এক হাত সমান বের করেইছে, আবার চোখগুলো এমন বড় বড় করে খাবারগুলোকে দেখছে যেন চোখ দিয়েই সব খেয়ে নেবে। আমাদের অবস্থা দেখে তো সবার হাল বেহাল। কেউ কোনো কথা বলছে না। শুধু আমাদের কার্যক্রম দেখে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে মামা বললেন, Ôওরে কে আছিস? ঢাকনাগুলো তোল। ওদের তো আর তর সইছেনা। ঢাকনা না তুললে তো তোদেরকেই গিলে ফেলবে।Õ

ভোজন হল মহা ভোজন। ভোজন এর বর্ণনা দিয়ে পাঠকের ক্ষুধা আর বাড়িয়ে দিতে চাচ্ছি না। শুধু একটা খবর জানিয়ে দিতে চাই।

রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাত ন্যাড়ার ফোন বেজে উঠল। সে যা রিংটোন মেরে রেখেছে!! সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে ফোন রিসিভ করল ন্যাড়া। তার মা ফোন করেছেন।

Ôহ্যালো, আমি মা বলছি। ওদিককার খবর কেমন?Õ

Ôহ্যালো মা, হ্যাঁ এদিকে সব ঠি-ঠি-ঠিকঠাকই আছে। বেশ মজায় আছি।Õ

Ôতাহলে এই খবরটা শোনার পর তোদের মজা মনে হয় চলে যাবে।Õ

Ôকেন? কী খ-খ-খ-খ-Õ ন্যাড়া লাউড স্পিকার চালু করে দেয়।Õ

Ôতোদের ছুটি শেষ! কী জানি কী কারণে হেডমাস্টারমশাই মাইকে প্রচার করেছেন। স্কুলে গেলে জানতে পারবি।Õ

হঠাৎ করে ফোন কেটে গেল। আমরা এক অনিশ্চয়তা ভরা ভাবনা নিয়ে ঘুমাতে গেলাম। রাতে একসাথে ঘুমানোর আগে খুনসুটির মজা নেওয়া যায়। কিন্তু সে মজা আমরা যেন উপভোগ করতে পেরেও পারলাম না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

১০

সময় লাগল না মামার বাড়ির সকলের মাঝে ন্যাড়ার মায়ের খবরটা ছড়িয়ে যেতে।

শুনেই সকলে চুপচাপ হয়ে গেল। আমরা বুঝে নিলাম, কেবল একদিনেই আমরা বাড়ির প্রত্যেকের মনে কতখানি জায়গা করে নিয়েছি। সকলেই নারাজ। কিন্তু কিছুই করার নেই। যেতেই হবে। আমরা সকলে তৈরি হয়ে নিলাম।

Ôআহা, এইরকম লাইফ এর স্বাদ তো আর জীবনে কোনদিন পাব না।Õ বিদায় নেওয়ার সময় পেঁপে ভাইয়ার এমন মন্তব্য আমাদের হতবাক করে দিল। তখন মামী বললেন, Ôতোমাকে রেঁধে খাওয়াতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছি পাপ্পু। আর কটা দিন থেকে যাও।

পেঁপে ভাইয়া এমন ভাব দেখালো যেন চিরকালই এখানে থেকে যাবে। কিন্তু বোম মাঝখান থেকে পেঁপে ভাইয়ার হাউস মিটিয়ে দিল। বলল, Ôএহন যাই মামি। আমারে সবাইরে আবার ইশকুলে যাওয়া লাগবি। ছুটি তো শ্যাষ হয়্যা গ্যালো। এহন চাইলেও আর থাকতে পারমু না। কিন্তু চিন্তা কইরো না। আবার ছুটি পাইলেই আসপনি।Õ

এই কথা শুনে পেঁপে ভাইয়া বোমের দিকে চোখ লাল করে তাকালো।

ন্যাড়া বোমের কথায় সায় দিয়ে বলল, Ôহ্যাঁ, যা-যা-যাওয়াটাই ভালো। আবার আসবো।Õ

এবার ভাইয়ার আর কিছু বলার থাকে না। আমাদের সবাইকে বেরিয়ে পড়তে হলো। মামা আমাদেরকে এগিয়ে দিতে আসতে চাইছিলেন। কিন্তু আমি বললাম, Ôথাক মামা, আপনার আর কষ্ট করতে হবে না। আপনার মেয়ে কালকে আমাদেরকে এমন ভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবকিছু দেখিয়েছে যে ৫০০ বছর পরে এখানে আসলেও সবকিছু চিনতে পারব।Õ

আমরা বেড়িয়ে পড়লাম।

মাঝপথে পেঁপে ভাইয়া বলে উঠলো, Ôধুত!! কয়েকদিন ইস্টে করবো মামার হোমে। আর এই বোম, দিলো সবকিছুতে ওয়াটার ঢেলে। আরে, অ্যান্টের হ্যান্ডের চুক এই ওয়ার্ল্ডে কেউ বানাতে পারে না রে।Õ

বোম জানতে চাইলো, Ôপিপে ভাই, তুমি পিপড়ের বাড়িত দাওয়াত পাইল্যা কবে?Õ

ন্যাড়া ভুল শুধরে দিলো, Ôচুক নয়, বলো কুক।Õ

Ôএইডো না হয় বুঝল্যাম। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর কো?Õ

Ôআরে বোম ভাই, মামির ইংরেজি জা-জা-জা-জানো না?Õ

Ôহ, সেইডো তো জানি। মামির ইংরেজি হইলো গিয়া আন্ট। কিন্তু আমাগো দেশের লোকেরা মিল্যা এই কতাডাকে আন্টি বানাইয়া ছাড়িছে।Õ

Ôঐ তো। পেঁপে ভাইয়া, মামিকে আন্ট না বলে, অ্যান্ট বলে দিয়েছে। কি-কি-কিন্তু ভাইয়া তো আর জানেনা যে, সে তার ক-ক-ক-থার মাধ্যমে মামীকে পি-পি-পি-পিপড়া বানিয়ে ছেড়েছে।Õ

হাসতে হাসতে আমরা পৌঁছে গেলাম স্টেশন। ট্রেন রেডি। ন্যাড়া গিয়ে টিকিট কিনে আনল। ফার্স্ট ক্লাস কামরা। আমরা ট্রেনে উঠে বসে পড়লাম। আবার সমস্যা বাঁধলো পেঁপে ভাইয়াকে নিয়ে। আমরা সিটে গিয়ে বসে পড়েছি। আর পেঁপে ভাইয়া নিজের সিটে বসা বাদ দিয়ে একটা বৃদ্ধ লোকের সাথে তর্ক জুড়েছে।

Ôহেই ইউ ওল্ড ম্যান, আমার সিটিং করার সিটে আপনি কেন সিট করেছেন?Õ

Ôবাবা, তুমি কী বলছ? আমি তো মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।Õ

এমন সময় টিকিট চেকারের আগমন ঘটল। আমরা হা করে তৈরি রয়েছি এবার কী হয় তা দেখার জন্য। টিকিট চেকার আমাদের সবার টিকিট দেখে নিলেন। আর তারপরই চলে গেলেন পেঁপে ভাইয়া আর বৃদ্ধ লোকটির কথাবার্তায় নুন ঢেলে দিতে।

Ôএই ছেলে, কী শুরু করেছো কি তুমি? এত চেঁচাচ্ছ কেন?Õ

Ôএই দেখুন না টিকিট চিকার সাহেব। এই ওল্ডম্যান আমার সিটে সিট করেছেন।Õ

Ôদেখি তোমার টিকিট?Õ

Ôএই যে সি করুন। BCA লেখা।Õ

Ôআরে ওটা BCA নয়, ওটা 13CA রে গাধা। যাও, তোমার সিট ওখানে। যত্তোসব!Õ

Ôওওও থাংকু থাংকু।Õ

পেঁপে ভাইয়া ঠিক জায়গায় এসে বসলো। টিকিট চেকারকে চিকার বলে ডেকেছিলো পেঁপে ভাইয়া, আর চেকারের চেহারাও বেশ শুকনো। তাই হয়তো চেকার একটু রেগেমেগেই অন্যদিকে চলে গেলেন।

Ôতো-তো-তোমাকে এত ডাকলাম। তবুও তু-তু-তুমি এলে না! তোমার সিট তো এখানে। তুমি খা-য়া-য়া-খালি খালি......।Õ

Ôহ্যাঁ এখন তো এগুলো টেল করবিই। সব এভেন্ট ঘটে যাওয়ার পর তো তোর মুখ ওপেন হয়। কেন রে? টিকিট কেনার সময় মনে ছিলো না? খেয়ে দেয়ে আর কোনো ওয়ার্ক পেলি না যে আমার জন্য এইরকম একটা ড্যাংজারাউস টিকিট কিনে আনলি!!Õ

Ôআরে ভা------য়াইয়া। এভেন্ট আর ড্যাংজারাউস না। ক-------কথাগুলো হবে event আর dangerous, বুঝলে?Õ

Ôআরে স্টপ করতো। তর্ক করতে করতে পেট ড্রোয়াই হয়ে গেলো।Õ

আমি জিজ্ঞেস করলাম, Ôকী বললে?

Ôআরে ড্রোয়াই, ড্রোয়াই। ডি আর ওয়াই, ড্রোয়াই। মানে শুকিয়ে যাওয়া। ইজ দ্যাট কিলিয়ার??Õ

Ôওও ড্রাই। মানে শুকিয়ে যাওয়া। আচ্ছা ভাইয়া, তোমাকে একটা প্রশ্ন করি। কথা বলতে বলতে তো মানুষের গলা শুকিয়ে যায়, কিন্তু তোমার পেট শুকিয়ে গেলো কেন?Õ

Ôগেছে তো গেছে। এবার আমাকে কিছু একটা খাওয়া।Õ

বোম সতর্কবাণী দিলো, Ôএ পিপে ভাই। এ তুমি কিন্তু আসার সময়কার লাকান শুরু করলা।Õ

ন্যাড়া বলল, Ôভা-ভা-ভাইয়ার পেটে এখন খেলা হচ্ছে। ছুঁচোদের খে-খে-খে-লা। ও পেঁপে ভাইয়া, বলো না কী খেলছে ওরা এখন তোমার পে-পে-পে-পেটে। ওরে খেপু, টিভি আর এন্টেনা নিয়ে আয় রে। খেলাটা আমরাও একটু দে-দে-দে-দেখি।Õ

Ôআমি আবার এই সময় কোথায় পাইবো এই দূরদর্শন আর অ্যা-অ্যা-অ্যা--- আরে কী যেন বলিলে?Õ

বোম বলল, Ôকোন যেন গল্পে পড়ছিলাম যে প্যাটে ঘুষি মাইরা বইসা থাকলে বুলে খিদা হারায় যায়। ভাইয়া, তুমিও ঐডাই করো, বুঝল্যা।Õ

কোন কথা বলল না পেঁপে ভাইয়া। কেবল ব্রুসলির মত ঘুরে দাড়ালো। তারপর বাম হাত দিয়ে বোমের মুখ চেপে ধরল, আর ডান হাত দিয়ে মুঠো পাকিয়ে ডিসুম করে বোমের ভূড়িতে একটা ঘুসি দিলো। তাতে কোনো শব্দ হলো না, কেবল নদীর মতো বোমের ভূড়িতেও ঢেউ উঠতে লাগলো।

Ôআগের বার আলার্ট করেছিলাম যে পুঞ্চ মারবো কিনা। এইবার লাইভে এসে মেরে দিলাম। হাঁ হাঁ হাঁ।Õ

আমি একটু ভয় পেয়েছি। বললাম, Ôভাইয়া, তোমার তো পেট শুখ গ্যায়া! তাহলে ইতনা হাসি কাঁহা সে আয়া?Õ

Ôআরে হাসি কি পেট থেকে আসে নাকি ফোল! হাসি আসে হার্ট থেকে, হার্ট।Õ

Ôবাহ ভাইয়া। হৃদপিন্ডের ইংরেজি তো ভা-ভা-ভা-ভালোই উচ্চারণ করলে।Õ

Ôদ্যাখ ন্যাড়া, আমি সব উচ্চারণ কারেন্ট কারেন্ট টেল করি। কিন্তু তোরা সেটা আন্ডারপ্যান্ট করতে পারিস না।Õ

Ôএই যে শুরু হয়ে গেল। কারেক্ট ব-ব-ব-ব-বলতে গিয়ে কারেন্ট বললে। আবার আন্ডারস্ট্যান্ড বলতে গিয়ে বললে আন্ডারপ্যান্ট। এগুলো তা------তাহলে কী?Õ

Ôআরে আমি কি সবঠিকতা নাকি?Õ

বোম সটান দাঁড়িয়ে পড়ে। বলে, Ôএই সবঠিকতা মানে আবার কী?Õ

Ôপেঁপে ভাইয়ার মতে, যে সব জা-জা-জা-জা-জানে সে সবজান্তা, আর যে সব ঠিক বলে সে সবঠিকতা, বু-বু-বু-বুঝেছ!Õ

আমরা সবাই হাসতে শুরু করেছি। আমি অবাক। পেঁপে ভাইয়ার ঘুষি খেয়ে বোমের কিছু হলো না কেন?

এমন সময় ট্রেনের কাজ দিয়ে একটা ঝাল মুড়িওয়ালা যাচ্ছিল। ন্যাড়া তাকে ডেকে আমাদের সবাইকে পেটভরে ঝাল মুড়ি খাইয়ে দিল।

 

 

 

 

১১

ট্রেন চলতে শুরু করলো।

আমরাও হেলেদুলে ট্রেনের সাথে তাল মেলাচ্ছি। হঠাৎ আমরা শুনতে পেলাম কেউ চিৎকার করছে, Ôস্টপ দ্য ট্রেন, আই সে স্টপ দ্য ট্রেন।Õ জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি একটা বিদেশি লোক ট্রেনের সাথে সাথে দৌড়াচ্ছে। ট্রেন ধরার চেষ্টা করছে আর তাই চিৎকার করছে। কিন্তু হয়তো এই চিৎকার ট্রেন চালকের কানে ঢুকছে না। তাই ট্রেনও থামছে না।

হঠাৎ আমাদের কামরা থেকে একটা স্বাস্থবান বডিবিল্ডার মত লোক দরজায় গেল। সে দরজা দিয়ে হাত বের করে দিল। কিন্তু ইংরেজিওয়ালা লোকটা তার হাত ধরতে পারছে না। অনেক্ষণ হাতাহাতি হলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু না। হাত ধরতেই পারলো না। তাই দেখলাম বডিবিল্ডার স্বয়ং ট্রেন থেকে নেমে গেল। আমরা ভাবলাম হয়তো কোনো বন্ধু হবে। বন্ধু ট্রেন ধরতে পারলো না, তাই নিজেই ট্রেন ছেড়ে দিয়ে বন্ধুর কাছে পাড়ি জমালো বডিবিল্ডার। কিন্তু না, সে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার কোনো পূর্বাভাস দেখায় নি। উল্টে ইংরেজিওয়ালাকে কাঁধে তুলে নিয়েছে। আবার টাইফুনের বেগে ট্রেনে উঠে পড়েছে।

সকলে বডিবিল্ডারের বাহবা দিচ্ছে। আর বোম একদৃষ্টে বডিবিল্ডারের দিকে। বোমকে দেখে মায়া হলো। ও বডিবিল্ডারকে দেখে কী ভাবছে তা আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি। ও বডিবিল্ডারের সিক্সপ্যাকের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হয়তো ভাবছিলো, Ôআমার এই বিশাল ভূড়ির জায়গায় যদি বডিবিল্ডারের সিক্সপ্যাকের মতো কয়েকটা প্যাক থাকতো, তাহলে কতই না ভালো হতো। হঠাৎ দেখলাম ও চমকে উঠেছে। বড় বড় হয়ে গেছে ওর চোখ।

বডিবিল্ডার চোখ পড়ল বোমের দিকে। সে এগিয়ে এসে বোমের কানে কানে কী যেন বলে গেল। তাতে দেখলাম, বোমের তেল চকচকে মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বেলুনের মতো চুপসে গেছে।

সবকিছুই খানেক বাদে ঠিকঠাক হয়ে গেল। শুধু বোমের মন খারাপ।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, Ôকী হয়েছে রে তোর? ঐ লোকটা চলে যাওয়ার পরই দেখলাম তোর টসটসে মুখ একেবারে শুকনা আনাজের মতো হয়ে গেছে। বল তো কেয়া হুয়া?Õ

Ôনসু ভাই, থাক না ওইসব কতা। আমি তোমারে ওইগুলা কইতে পারমু না। যদি কই, তাইলে আমার কপালে মেলা দুক্কু আছে।Õ

আমি পাশের এক যাত্রী ব্যাগ থেকে মুলা বের করে ওকে শাসালাম, Ôনাহি নাহি। বোলনা পারেগা। তাড়াতাড়ি বল। নাহলে এই মুলা দিয়ে তোর পেট ফুটা কারদুংগা।Õ

Ôএ এ, কইতাছি, কইতাছি।Õ

এইটা ছিলো বোমের একটা অভ্যাস। ভালো না খারাপ জানি না, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ভালো। ওর ভূড়ির কারণে ওর পেটে অনেক জায়গা আছে, কিন্তু তবুও ও পেটে কথা চেপে রাখতে পারে না। একটু ভয় দেখালেই বলে দেয়।

Ôঐ হাতির পোলা ঐ ইংরেজিওয়ালারে কী কামে ট্রেনে তুলল শুনবা? ঐ হাতির বাচ্চা একখান চোর। ও ঐ লোকটার পকেট থাইক্যা মানিব্যাগ মাইর‍্যা দিছে। আমি দেখতে পাইছিলাম, তাই আমারে শাসাইয়া গ্যাছে।Õ

Ôওরে বাপরে। বহুত ভয়ংকর বাত হ্যায়। যাকগে, আমাকে বলেছিস বলেছিস। আর কাউকে যেন এই খবর বিতরণ করতে যাস না। আগার কিয়া তো........।Õ

Ôকিয়া তো কেয়া......না মানে, করলে কী হবি?Õ

বোম আমার মতো করে হিন্দিতে কথা বলল। এবার আমারও তো একটা কর্তব্য আছে। তাই আমিও মুখ ফুলিয়ে বোমের মতো করে বলতে লাগলাম, Ôকী আর হবি। তোর মুন্ডু ঘ্যাচাং ফুঁ হয়্যা যাবি। তকন আর আমারে সাতে ঘুরতে পারবু নাই। বুঝচু?Õ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

১২

দুপুরে খাওয়ার সময় হলো।

ট্রেন থেমে গেছে। মানুষেরা সব ওঠানামা করছে। আমাদের খাবার মামিমা প্যাক করে দিয়েছিলেন। আমরা সবাই সেইটা খেতে শুরু করল। পেঁপে ভাইয়া তো এমন খাওয়া খাচ্ছে, যেন নিশ্বাস নেওয়ার সময় নেই। তখন খেপু মুখ খুলল, Ôসত্য কথা এইটা যে, মামীর নিজ হস্তে রান্নার কোন তুলনা নাই। তিনি যা তৈয়ার করেন তাহাই যেন অমৃত।Õ

ন্যাড়া চটে ওঠে, Ôনে, সাধু ভাষার ভাষণ শুরু হয়ে গেল।Õ এইটুকু বলে আবার নরম হয়ে বলল, Ôএকটা জিনিস লক্ষ্য ক-ক-ক-করলাম যে, তোমার-তোমার-তো-তোমাদের প্রত্যেকের অসাধারণ গুণগুলো, একটু বেশি হয়। আমারটা অনেকটা কম হয়। আমি যে তোতলা না, তবুও আমার কথা মাঝে মাঝে আটকে যায়।

পেঁপে ভাইয়া খেকিয়ে ওঠে, Ôতোর কি আফসোস হচ্ছে?Õ

খেপু বলল, Ôআগে বলিবে তো। আমি এখনই মন্ত্র পরিবো। আর তোমার তোতলামো ডবল হইয়া যাইবে।Õ

Ôআরে না না। আমি কি তা-তা-আ-তাই বলেছি নাকি।Õ

Ôতোতলাং কোতলাং যোতলাং থুই, মনের আশা পূরণ কর তুই।Õ

Ôকী করলি এটা? এবার আমার কী হবে?Õ

Ôএখন থাকিয়া তোমার তোতলামো আরো বেশী হইয়া যাইবে। আমার পর-দাদুর কাছে হইতে শেখা মন্ত্র। কোনোদিন বিফলে যাইবে না।Õ

পেঁপে ভাইয়া চটে গেলো। বলল, Ôআরে তোরা কী ব্লেড কাচি শুরু করেছিস রে।Õ

 ন্যাড়া বলল, Ôব্লেড আর কাঁচি নয়, ভাইয়া। ক-ক-ক-ক-কথাটা হবে Bless আর Curse, মামা-মা-মানে আশীর্বাদ ও অভিশাপ। বুবু-বু-বুঝলে?Õ

আমি ন্যাড়াকে ভয় দেখানোর জন্য বললাম, Ôতা ঠিক আছে। কিন্তু নাড়া, কেয়া তুঝে থোরাসা ভি আন্দাজা হ্যায় কি তোর তোতলামো ট্রিপল হয়ে গেছে।Õ

Ôমামা-মা-মা-মাথা খারাপ হলো নাকি তোমার। আমি-আ-আ-আমি তোতলাচ্ছি? বেশি করে? ধুর!Õ

Ôমেরা দিমাগ তো ঠিক হ্যায় লিকিন তেরা দিমাগ......নাহি, তেরা জবান, বহুত বেশি তোতলা হো গ্যায়া। এবার নাচ। খেপুর মন্ত্র শায়াদ জালওয়া দিখা দিয়া।Õ

Ôধ্যা-ধ্যা-ধ্যা......।Õ

Ôধ্যাত বলতে গিয়েও এতবার ধ্যা ধ্যা করতে হচ্ছে। তাহলে একবার ভাব।Õ

বোমের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে, Ôলে নাড়্যা, এখন থাইকা তোর গুণ আমাদের লাকান হয়্যা গেলো। তোকে আমাদের দলে স্বা.......। আরে কী যেন কয়?Õ

Ôস্বাগতম।Õ

Ôহ হ, সোয়াগতম।Õ

পেঁপে ভাইয়া বলল, হয়েছে হয়েছে। এবার তোরা কি তোদের মাউথে একটু লক মারবি? আমার ইট করতে পররবলেম হচ্ছে।Õ

Ôসব তো ফু-ফু-ফু-ফু---রিয়েই দিয়েছ।Õ

Ôও, সররি!! আমি তো ওয়াটচই করি নি কখন ইভ্রিথিং ফিনিশ হয়ে গেছে, যাকগে, নো ম্যাটার। আহ, টু মুচ ইট করেছি রে। বেলিতে আর ইস্পেস নাই।Õ

Ôইভ্রিথিং নয়, কথাটা everything, আর টু মুচ নয়, কথাটা too much, বু-বু-বু-বু---ঝেছ?Õ

Ôওর দুইটা কথাই ওরং!! আরে ইভ্রিথিং বানানে e আছে। আর মুচ বানানে m এর পরে u আছে। আর u এর উচ্চারণ হ্রস্ব উ হয়, জানিস না?Õ

Ôতু-তু-তু-মি আবার ভু-ভু-ভু-ভুল করলে। কথাটা ওরং নয়, কথাটা wrong হবে।Õ

Ôতাহলে ডব্লিউ এর উচ্চারণ কি তোর ফেদার করবে?Õ

বোম মাঝখান থেকে বলল, Ôফেদার মানে হইলো গিয়ে পালক। তো নাড়্যার পালক উচ্চারণ করবো মানে? নাড়্যা কি পাখি নাকি? নাড়্যার ফেদার কুন্টি?Õ

Ôআরে বোম ভাই, আমাদের পেপ-পেপ্প-পে--- আরে ধুর, ভাইয়া, ভাইয়া। আমাদের ভাইয়া father বলতে দিয়ে ফেদার ব-ব-ব-ব-ব-লে দিয়েছে।Õ

ভাইয়ার চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। ন্যাড়াকে হয়তো হাসপাতালে পাঠিয়েই দিতো। কিন্তু সেটা হলো না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

১৩

বিকালে যখন ট্রেন একটা স্টেশনে থামলো, পেঁপে ভাইয়া নেমে গেলো।

আমরা সকলে খুব খুশি। অন্তত খানিক্ষণের জন্য হলেও তো ভাইয়ার বিদঘুটে ভাষা থেকে মুক্তি মিলবে! কিন্তু না। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আমরা ভাইয়ার অনুপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম। সত্যি কেন জানিনা মনে হচ্ছিলো কিছু একটা নাই নাই। আরও কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই আমরা হাতপা ছেড়ে একেবারে অপেক্ষা করে বসে থাকলাম।

মিনিট দশেক পর ভাইয়া ফিরে এলো। আমাদের হাবভাব যেন এক্ষুনি পেঁপে ভাইয়াকে খামচে দিই এতক্ষণ দেরী করার জন্য।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, Ôকিধারসে আরাহেহো?Õ

Ôএই একটু ওয়ালক করে এলাম।Õ

ন্যাড়া বলল, Ôআরে ভাইয়া, ওয়ালক কী জি-জি-জ-ই-জিনিস? কথাটা হবে ওয়াক।Õ

Ôথু।Õ

Ôঐ বোম ভাই, তু-তু-তু-তুমি আবার থু করলে কেন?Õ

Ôনা মানে তুই কইলি ওয়াক, আর আমি সেইডার সাথে থু লাগায়া ওয়াক থু কইর‍্যা দিলেম। শুধু ওয়াক তো মানায় না, তাইন্যা বল?Õ

Ôআরে এ ওয়াক, সে ওয়াক নয়। এইটা হচ্ছে walk, যার মা-মা-ম-আ-আনে হাঁটা।Õ

পেঁপে ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো, Ôতাহলে L এর উচ্চারণ কে করবে? তোর মা করবে?Õ

Ôভাগ্যিস বাংলাটাই বললে। বাবার ইংরেজি বলতে গিয়ে তো ফেদার করে দিয়েছিলে, মায়ের ইংরেজি ব-ব-ব-ব-বলতে গিয়ে তো আবার মাডার করে দিতে!Õ

আমি বললাম, Ôপেঁপে ভাইয়ার অশুদ্ধ কথা শুনতে শুনতে হামলোগ তাং আগেয়াহে।Õ

বোম টিপ্পনী কাটলো, Ôআর তোমার হিন্ডী শুনতেও তো ভাল্লাগেনা। ছাড়ান দেও।Õ

Ôও, আর তোর শুদ্ধ খাঁটি আঞ্চলিক ভাষা শুনতে মনে হয় আমাদের ভালো লাগে।Õ

খেপু বলল, Ôআরে তোমরা কী বচসা শুরু করলে। থামো, নচেৎ আমি ক্রোধে লিপ্ত হইবো।Õ

আমি বললাম, Ôক্রোধ মানুষ্য কা দুশমন হ্যায়।Õ

পেঁপে ভাইয়া খেপুর দিকে চেয়ে বলল, Ôএতক্ষণ নুন হয়ে বসে ছিলো, এইবার মুখ খুলল হতভাগা।Õ

বোম জিজ্ঞেস করলো, Ôকী কইলে? নুন হইয়া বইসা ছিলো। কই? খেপু তো মানুষই আছে। লবণ তো হয় নাই।Õ

Ôআরে, এইটা সেই নুন নয় রে বাবা, এইটা হলো nun, মানে সন্ন্যাসীনি। এইটা খাবারের নু-ন-উ-উ...।Õ

আমাকে বলে উঠতেই হলো, Ôবলিস না, বলিস না। তোর তোতলামির চক্করে বিপদজনক শব্দটা বের হয়ে যাবে।Õ

পেঁপে ভাইয়া গর্জে ওঠে, Ôতোরা কি তোদের ফতোয়া দেওয়া বন্ধ করবি? জানিস না, তোদের তর্কাতর্কি অন্যান্য প্যাসকেলদের জন্য প্রবলেম মেক করছে?Õ

Ôকী বললে, প্যাসকেল?Õ

Ôনসু ভাই, আমাদের পেঁপে ভাইয়া যাত্রীর ইংরেজি Passenger না বলে, প্যাসকেল বলে দিয়েছে।Õ

Ôবাহ ভাইয়া বাহ! বিজ্ঞানীদেরকেও ছাড়লে না?Õ

Ôকেন? এইটা কি কোনো সাইলেন্সারের নাম ছিলো নাকি?Õ

Ôআরে ভাইয়া, সাইলেন্সার নয়, বি-বি-বি-বি-বিজ্ঞানীর ইংরেজি Scientist হয়।Õ

Ôএ তোরা থাম তো!!!Õ

আমরা সবাই চুপ করে গেলাম। আর একটা কথা নেই কারো মুখে। সবাই বোবা। আর যদি কেউ একটু টু শব্দ করে তাহলে নির্ঘাত তাঁকে পেঁপে ভাইয়ার কাটু চড় সহ্য করতে হবে।

ট্রেন আবার চলতে শুরু করেছে। এরই মাঝে খেপু গান ধরেছে।

আমারো পরাণও যাহা চায়

তুমি তাই, তুমি তাইইইই গো

আমারো পরাণও যাহা চায়...

Ôকী রে খেপু! কেবল তো দেড় আঙ্গুলে হয়েছিস। এখনই Ôতুমি কে পেয়ে গেছিস?Õ

Ôআরে নসুদা, আমি তো এখনো পর্যন্ত কাহাকেও পাই নাই। কিন্তু যদি অদূর ভবিষ্যতে কাহাকে পাইয়া যাই, তাহলে এই গানটি প্রথম গাহিয়া শোনাইবো। তাই অনুশীলন চলিতেছে।Õ

Ôও, তাই বল। আমি তো ভেবেছিলাম, ভেবেছিলাম, ভেবে...।Õ 

আমার মুখে আর কথা আসছে না। কারণ আমি দেখতে পেয়েছি একটা সাইনবোর্ড। যাতে লেখা আছে Ôজয়পুরহাট জিন্দাবাদ। এটা সেই জায়গা যেখানে মোল্লা খুশখুশাউল্লাহ নেমে গিয়েছিলেন। যদি আবার চলে আসেন, তাহলে কি আমরা আর বাড়ি ফিরতে পারব। সেবার তো আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার কি হবে?

সবার কাছে কথাটা বললাম। কাউকে চিন্তিত হতে দেখা গেল না। আমার কথা শুনে পেঁপে ভাইয়া বলল, Ôআরে মাইনাস কর ঐ খ্যাশখ্যাশ না কী যেন, হ্যাঁ খুশখুশাউল্লাহ। আমিও কম যাই না। ওয়ান টাইম, কেবল ওয়ান টাইম আমার ফেসোফেসি আসুক। তাহলে দেখাবো পাপ্পু হাসান কী ঠ্যাং!!Õ

আমি ন্যাড়ার কানে কানে বললাম, Ôভাইয়া কী বলল রে? একটু অনুবাদ করে দে।Õ

Ôফেস মানে মুখ, তাই মুখোমুখি বলতে চেয়ে ফেসোফেসি বলে দিয়েছে ভাইয়া। আর শেষেরটা তো আরো মা-মাম-মারাত্মক। বলতে চেয়েছিলো দেখাবে পাপ্পু হাসান কী জি-জি-জি-জিনিস! কিন্তু একটা অশুদ্ধ না হলে তো ভাইয়ার চ-----লে না। তাই জিনিস এর ইংরেজি thing ঢুকিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু সেখানেও ব্যার্থ। Thing বলতে গিয়ে ঠ্যাং হয়ে গেছে।Õ

পেঁপে ভাইয়া বলেই চলেছে, Ôএকেবারে মজা টের পাইয়ে দেবো। ওর টু ফুট লম্বা দাড়ি টেনে-হিঁচড়ে সাড়ে আঠাশ ফুট না বানাতে পারলে আমার নামে ছাগল পুষবি।Õ

বোম প্রস্তাব রাখে, Ôচলো পিপেদা। এই সামনেই এখখান পশুর হাট বইছে। ওইখান থাইক্যা একটা বরকি কিন্যা লি।Õ

Ôএ বোম এ। তোর কি মনে হচ্ছে আমি ঐ ওয়ার্ক টি করিতে পারিবো না?  যা! আমি তো করবোই। এ খেপু, মন্ত্র পড়। যেভাবে পারিস মোল্লাকে এইখানে ডেকে আন। তারপর।Õ

আমি চিৎকার দিলাম, Ôব্যাস। সবাই থামো। নাহলে আমি কিন্তু সব ফাঁস করে দেবো।Õ

খেপু মনেহয় ভুল শুনেছে। কারন আমার মুখ থেকে ফাঁস নামক শব্দটি শুনেই ওর চোখ কৌতুহলে ভরে গেছে। জিজ্ঞেস করলো, Ôচাষ করিবে? এই ট্রেনের মধ্যে তো চাষ উপযোগি কোনো জমি দেখিতেছি না। তাহলে নসু ভাই, তুমি চাষ করিবে কোথায়?Õ

ন্যাড়া বলল, Ôনসু ভাইয়া, নাও, এইটাই বাকি ছি-ছি-ছি-ছিলো। খেপু আবার কানে বেশি শুনছে। আরে কেউ ওকে কটনবাট দাও। কান সাফ করুক।Õ

Ôন্যাড়া, তোর ফারজ এখন দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। তোকে এবার কেবল পেঁপে ভাইয়ার ইংরেজি ধরতে হবে তা নয়, তার সাথে খেপুর কানে আসল শব্দ ঘুসাতে হবে।Õ

Ôনিজেরটা তো ব-ব-ব—ব-বললে না নসু ভাইয়া? তোমার হিন্দিগুলোও তো ধরতে হবে। কর্তব্য বলতে গিয়ে ফারজ বললে, আবার ঢুকাতে বলতে গিয়ে বললে ঘুসাতে!!Õ

Ôতা বলেছি বলেছি। কিন্তু পেঁপে ভাইয়া বা খেপুর মতো অশুদ্ধ বলছি না তো।Õ

বোম কার পক্ষ নিলো বুঝলাম না। বলল, Ôএকলা মানুষ, তিনখান কাম!Õ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

১৪

হঠাত ট্রেন গেলো থেমে।

বাইরে দিয়ে একটা স্টেশন দেখতে পেলাম। অত মনোযোগ দিয়ে দেখছি না। আমাদের বগির দরজা খুলে গেলো। ভেতরে একটা লোক পিছন দিকে মুখ করে উঠলো। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা। দাড়িও আছে প্রচুর। আমরা প্রথমে বুঝতে না পারলেও যখন লোকটা আমাদের দিকে মুখ করে তাকালো, আমরা সবাই হাড়ে হাড়ে বুঝে গেলাম, সে আর কেউ নয়। স্বয়ং খুশখুশাউল্লাহ!!!

আমার চোখ আর মুখ দুইটাই বড় বড় হয়ে গেলো। পেঁপে ভাইয়ারও একই অবস্থা, সিটে বসে ছিলো, পড়ে গেলো। বোম হরিনাম জপ করছে। আর ন্যাড়া গান ধরেছে,

প্রাণপাখি উড়ে যাবে পিঞ্জরও ছেড়ে, ধরাধরি সবই রবে, আমি যাবো চলে...।

হাত-পা ভাঙ্গার ভয় থাকলে কোনো তোতলামোই কাজে আসে না, সব কথা পরিষ্কার হয়েই বের হয়, এই সত্যটা ন্যাড়া প্রমাণ করে দিলো। আমি এগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বলে ফেলেছি, Ôযেখানে মোল্লার ভয়, সেখানেই ট্রেন থামে।Õ

বোম আমার পেছন থেকে বলছে, Ôহরিবোল নসু দা, হরিবোল মিলল না তো, হরিবোল।Õ

সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রত্যুত্তর, Ôহতভাগা, আমার সারা শরীর এখন ভয়ের চোটে ভাইব্রেট করছে, আর তুই মেলানোর কথা বলছিস? একটু দেরী কর না। দেখবি মোল্লা আমাদের হাড্ডিগুলো সব ভেঙে আলাদা আলাদা করে সাজিয়ে রাখবে, একেবারে মিলিয়ে মিলিয়ে।Õ

খুশখুশাউল্লাহ কিন্তু কোনো আচরণ দেখাচ্ছেন না। হারানো শিকার আবার ফিরে পাওয়ার পর বাঘ এমনি করে মনে হয়। কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে মোল্লা বললেন, Ôতোমরা এমন করছ কেন?Õ

আমি তো হা করেইছিলাম, হাঁ এর সাইজ আরো বড় হয়ে গেল। বোমের হরিবল গলার সুর পাল্টে গেছে। ন্যাড়া গান বন্ধ করেছে, কিন্তু ওর চোখের পরিধি ৫ ইঞ্চি বেড়ে গেছে। পেঁপে ভাইয়া এতক্ষণ কাত হয়ে পড়েছিল, এবার গড়াগড়ি দিল।

মোল্লা বললেন, Ôযাইহোক, তোমাদের সাথে কী হচ্ছে জানি না। কিন্তু আমার পরিচয়টা জেনে রাখা ভালো। আমি হচ্ছে গিয়ে......।Õ

Ôথাক হুজুর, বলতে হবে না, আমরা সবই জানি।Õ

Ôকী যে বলো? তুমি সব জানো? কিন্তু তোমার সাথে তো আমার আগে দেখা পর্যন্ত হয়নি। তাহলে তুমি আমাকে চিনবে কেমন করে?Õ

আমি মনে মনে বললাম, Ôআপনি কে সেটা তো আমি জানিই, আর আমি এটাও জানি যে আপনার রসগোল্লার হাঁড়ি কে কে ধ্বংস করেছিল।Õ প্রকাশ্যে বললাম, Ôআপনাকে জানা আর এমন কী ব্যাপার হুজুর। আপনার জনপ্রিয়তা তো আকাশচুম্বী। আপনিই তো সেই সেই মহান খুশখুশাউল্লাহ!Õ

Ôঅ্যাঁ? খুশখুশাউল্লাহ? এইটা আবার কারো নাম হয় নাকি?Õ

আমরা অবাক হচ্ছিই তো হচ্ছিই। কিন্তু ন্যাড়া চট করে আমাদের অবাক হওয়া থামিয়ে দিলো কেবল এটা বলে, Ôআরে, আমরা যাকে ভা-ভা-ভাবছি, তিনি হয়তো ইনি নন।Õ

মোল্লা বললেন, Ôতা অবশ্যই। তোমাদের সাথে আমার প্রথমবার দেখা হচ্ছে। আর কোন বে-আক্কেল নিজের নাম এমন রাখে। খুশখুশাউল্লাহ! ছি! এর মানে জানো?Õ

Ôনা হুজুর।Õ

Ôথাক, ঐটা আমি মুখে আনতেও চাচ্ছি না। যাইহোক, তোমাদের কথা অনুসারে, তোমরা আমার মতো কাউকে দেখেছো, তাই না?Õ

Ôহ হুজুর, এক্কেবারে আপনের লাকান চেহারা। পাঞ্জাবি-দাড়ি সব আপনের লাকান।Õ

Ôতোমরা যার কথা বলছ, তাকে হয়তো আমি চিনি।Õ

Ôআমাদেরকেও একটু খুলে বলুন।Õ

Ôবেশি জানার দরকার নেই। শুধু এইটুকু জেনে রাখো, ঐ লোকটি আমার মান-সম্মান নষ্ট করার জন্য এসব করছে।Õ

Ôহ্যাঁ, হুজুর। এরকমটাই মনে হয়। তাছাড়া এমনি এমনি কেন সে তার নাম খুশখুশাউল্লাহ রাখবে।Õ

ন্যাড়া আমার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলল, Ôআর কেনই বা, এশার আযানের আগেই নামায পড়ে নেবে। আর তাছাড়া ট্রেনের ডিসকাউন্টের কথা তো ছে-ছে-ছে-ছেড়েই দিলাম।Õ

Ôযে যা করে করুক। আমার সম্মান যেখানে আছে সেখানেই থাকবে, যদি আল্লাহ চান। আচ্ছা তোমরা.......।Õ

এরপর আমরা দারুণ খোশগল্প করলাম। কথায় কথায় মোল্লাসাহেবের নামটাও জেনে নেওয়া হলো, আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। কোথায় খুশখুশাউল্লাহ, আর কোথায় আবদুল্লাহ, আকাশ পাতাল তফাৎ। আর খুশখুশাউল্লাহর সাথে আমরা কী কী করেছি তার গোটা গল্প শুনে হুজুর আমাদের বাহবা দিলেন। এতে বুঝতে পারলাম মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করে কাজ করলেও বাহবা পাওয়া যায়।

গল্পের শেষের দিকে মোল্লা সাহেব আমাদেরকে নিজেদের স্পেশাল নামগুলো ঠিক করার পরামর্শ দিলেন। তার সাথে সুন্দর নামের গুরুত্বের ওপর একটা ছোটখাট বক্তৃতা দিয়ে দিলেন। আমরা সবাই তন্ময় হয়ে শুনছিলাম। শেষে তিনি পেঁপে ভাইয়াকে তো নিজের আসল নামটাও পরিবর্তন করতে বলে দিলেন। কিন্তু পেঁপে ভাইয়া মানবে কী? অবশ্য সে হুজুরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে ধীরে ধীরে মানা শুরু করবে। কিন্তু সেই ধীরে ধীরে যে কবে শুরু হবে, তা ঠিক বলতে পারছি না। তবে যেদিন থেকে পেঁপে ভাইয়া আমাদের ডাকনাম ঠিক করবে, সেদিন থেকে আমরাও তাঁকে পেঁপে ভাইয়া বলে ডাকা ছেড়ে দেবো।  

 

 

 

১৫

ট্রেন পেয়ে গেল আমাদের স্টেশন।

হুজুরকে বিদায় জানিয়ে আমরা সবাই নেমে গেলাম। তখন বাজে রাত আটটা। সবাই যে যার বাড়ি ফিরে গেলাম। বাড়িতেও মামার বাড়ির মতন অবস্থা। কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। সকালে আবার সবাই উপস্থিত হলাম আহমদ ভাইয়ের চায়ের দোকানে। চা পান করতে করতে আড্ডা শুরু করলাম।

পেঁপে ভাইয়া বলল, Ôহুম, তোরা বিলিভ করতে পারবি না, কাল রাতে হোমে গিয়ে আমার কী কন্ডিশনার!! কিছুই মাইন্ডে নাই। মর্নিং এ যখন সিলিপ থেকে ওয়েক আপ করলাম তখন টুকি (ভাইয়ার ছোট বোন) বলল, আমি নাকি ডোরের ওপর সিলিপ করেছিলাম। ডোর খুলতেই আমি নাকি ফল করেছি।Õ

Ôঅনেকগুলো ভুল করেছ। তাই আর কি-কি-কি-কিছু বললাম না। কাল রাতে বাসায় ঢুকে পড়েছিলাম। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছি। আর ফুস করে ঘু-ঘু-ঘু-ঘুমিয়ে গেছি।Õ

বোম বলল, Ôআমার কাহিনী কিন্তু ম্যালা জটিল। আমি তো হাঁটতেই পারতিছিলাম না। ম্যালা কষ্ট কইর‍্যা ত্যানেগা বাড়িত গেছি। ঘরে তো যাতেই পারি নি। সোফাতেই হরিবোল!!Õ

খেপু তার কাহিনী ঝাড়লো, Ôদেখো, আমার অত কষ্ট হয় নাই। বাল্যকাল হইতেই আমি অনেক যোগব্যায়াম অনুশীলন করিয়াছি।Õ

Ôযোগব্যাম মেলা করছু। এইব্যার কানের ব্যাম করিস।Õ

পেঁপে ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে বলল, Ôকিরে নসু, তুই তোরটা টেল কর। আমরা আমাদের সবকিছু ওপেন করে বললাম, এবার তুইও শ্যারে কর তোর এডভেন-ভেন-ভেন--।Õ

Ôঅ্যাডভেঞ্চার! উচ্চারণও করতে পারো না। আগেই কন্ডিশন ব-ব-ব-ব-ব-বলতে গিয়ে কন্ডিশনার বেড়িয়ে গেছে। আর share বলতে গিয়ে শ্যারে!!!Õ

Ôদেখ, আমি যা টেল করি সেইটাই রাইঘট। ইঙ্গরেজদের চাইতে আমি গুড ইংলিশ স্পিক করি, আন্ডারপ্যান্ট!!!Õ

Ôআরে প্যান্ট নয়, স্ট্যান্ড হবে। Rightgh এর উচ্চারণ হবে না।Õ

খেপু মুখ খোলে, Ôস্ট্যাম্প? স্ট্যাম্প কোথা হইতে আসিলো? এইখানে কোথায় ব্যাডবল খেলা হইতেছে গো?Õ

Ôআরে ওইটা স্ট্যাম্প নয়, স্ট্যান্ড রে, স্ট্যান্ড। তুই তুলা দিয়া নিজের পোঁচা কান সাফ কইর‍্যা আসেক-গা তো!!Õ

Ôমুলা? মুলা দিয়া কেমনে কর্ণ পরিচ্ছন্ন করিবো?Õ

Ôথাম রে বাপ!Õ

Ôচাপ? আমি চাপ দিতেছি? কোথায়?Õ

Ôহইছে ল্যাও!Õ

Ôম্যাও? এইখানে বিড়াল কোথায়?Õ

Ôইয়ার ক্লেইয়ান কর, হতভাগা। নাহলে আমাদের হেড ব্যাট করে দিবি।Õ

Ôক্লিন, ক্লিন। ব্যাড, ব্যাড!Õ

Ôস্টপ।Õ

Ôতু-তু-তুমি স্টপ।Õ

এদের তর্কাতর্কি তো শেষ হবার নয়। চলতেই থাকবে। শেষ পর্যন্ত আমার কাহিনী আর শোনা হয়নি। খেপুকে সামলানোর পর অন্য এক আজগুবি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা শুরু হলো।

 

এবারের মামাবাড়ির কাহিনী তো ভালোই জমলো। তবে এই তো সবে শুরু। সামনে আরো আসছে কত কী। আবার ফিরে আসবো আমরা, নতুন আরেক কাহিনী নিয়ে।

তব তক হামারে লিয়ে ইন্তেজার কারনা!!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কাহিনী শেষ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)